পাঁচ কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে লাল তারকা দিয়ে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এগুলো হচ্ছে-অনুমোদিত আসন সংখ্যার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি, অননুমোদিত প্রোগ্রাম ও কোর্স পরিচালনা, অনুমোদনহীন ভবন ও ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা। এছাড়া ছয় মাসের বেশি সময় আচার্য কর্তৃক নিযুক্ত উপাচার্য ও ট্রেজারার না থাকা, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধ থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি এ তালিকায় পড়বে।
সম্প্রতি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দের সভাপতিত্বে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সমন্বয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। শিগগিরই এসব বিষয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবহিত করা হবে।
এদিকে লাল তারকা চিহ্নিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি না হতে পরামর্শ দিয়েছে কমিশন। অনুমোদিত প্রোগ্রাম এবং এর আসন সংখ্যা নিশ্চিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আহ্বান জানানো হয়েছে। সংস্থাটি আরও বলছে, অন্যান্য সমস্যার কারণেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে লাল তারকা দিয়ে চিহ্নিত করা হবে।
এ বিষয়ে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, অনুমোদিত আসনের বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি করার কোনো সুযোগ নেই। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এটি করে থাকলে তা আইনগতভাবে বৈধ হবে না। অতিরিক্ত ভর্তি শিক্ষার্থীদের সনদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেট বিক্রির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে।
বর্তমানে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করে প্রোগ্রাম চালু রেখেছে, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি তার একটি। প্রতিষ্ঠানটি বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে ইউজিসি কর্তৃক অনুমোদিত আসন সংখ্যার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে বলে ইউজিসি জানতে পেরেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইউজিসির একজনকে প্রধান করে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার ও বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যানকে সোমবার কমিশনে তলব করা হলে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউজিসি জানায়, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে সেমিস্টারপ্রতি ভর্তির আসন সংখ্যা ৪০। যদিও গত শিক্ষাবর্ষে শুধু এক সেমিস্টারেই বিভাগটিতে নয় শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নয়, অধিকাংশ প্রোগ্রামের ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে অনুমোদিত আসনের কয়েক গুণ বেশি। এর মধ্যে গত শিক্ষাবর্ষের স্প্রিংয়ে বিএসসি ইন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (ইইই) ৩৫টি আসনের বিপরীতে ৫৮৪ জন, বিএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৩০টি আসনের বিপরীতে ২৩৯, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৩০টি আসনের বিপরীতে ১৪৩ ও ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (বিবিএ) ৫০টি আসনের বিপরীতে ৯৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি।
এ বিষয়ে অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই ইউজিসি থেকে পূর্বানুমোদন নিতে হয়। শিক্ষক সংখ্যা ও ল্যাব সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় বিষয়াদি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামের জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সর্বোচ্চ আসন সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয় কমিশন। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো প্রোগ্রামে এক সেমিস্টারে সেশনে ৯০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি ও যথাযথভাবে শিক্ষাদান করার সক্ষমতা বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েরই নেই বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামে অনুমোদিত আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করলে তা সম্পূর্ণরূপে বেআইনি ও অবৈধ হিসাবে গণ্য হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওয়েবসাইটে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে লাল তারকা দিয়ে চিহ্নিত করা হবে।