সরকারি নীতিমালা অমান্য করে দুই শিক্ষক চাকরি করে যাচ্ছেন মানিক ডিএস আমিনিয়া আলিম মাদ্রাসায়। একজন হচ্ছেন জেলা জামায়াতের আমির ও মাদ্রাসার মৌলভী শিক্ষক তাজউদ্দিন খান, যিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি মেহেরপুর জেলা জামায়াতের দায়িত্ব পালন করছে। অপরজন লাইব্রেরিয়ান খালিদ হাসান, জাল সনদে চাকরি করছেন। জাল সনদ ধরা পড়ার পরেও এক বছর বহাল তবিয়তে চাকরি করেছেন, বর্তমানে বিদেশে থেকেও চাকরি করছেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বলছে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
মৌলবি শিক্ষক তাজউদ্দিন খানের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একাধিক মামলা সহ মোট নয়টি মামলা চলমান। প্রতি মাসে শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত থেকে কোর্টে হাজিরা দিন ১৫ থেকে ১৬ দিন। গত বছরের ৭ এপ্রিল থেকে ২৩ মে পর্যন্ত কারাগারে হাজত বাসের কারণে ওই দুই মাস অনুপস্থিত থাকলেও তাকে বরখাস্ত করা হয়নি, এমনকি বেতনও কাটা হয়নি।
এদিকে, জাল সনদ দিয়ে চাকরি বিষয়টি প্রমাণিত হলে বেতন না পেলেও মাঝে মাঝে মাদ্রাসায় যেতেন খালিদ হাসান। পরে চলে যান বিদেশে। তবুও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরিচ্যুত করতে পারেননি। অভিযোগ রয়েছে মোটা অঙেÍর অর্থের বিনিয়ময়ে তিনি ওই চাকরিটি পেয়েছিলেন, তাই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ তাকে চাকরিচ্যুৎ করতে পারেননি। জাল সনদে চাকরি পাওয়া খালিদ হাসান মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার মানিকনগর ডিএস আমিনিয়া আলিম মাদ্রাসার লাইব্রেরীয়ান পদে যোগদান করেছিলেন ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। খালিদ হাসান মুজিবনগর উপজেলার পুরন্দরপুর গ্রামের আবু তালেবের ছেলে।
মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর মাদ্রাসায় লাইব্রেরিয়া পদে নিয়োগ পেয়ে পরদিন তিনি মাদ্রাসায় যোগদান করেন। যোগদানের পর বেতনের জন্য মাদ্রাসা বোর্ডের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছিলে। সেখানে তার সনদ যাচাই ব্ছাাই করে তারা জাল বলে সনাক্ত করেন। এর পর থেকে তিনি মাঝে মাঝে মাদ্রাসায় যেতেন। মাস দুয়েক আগে তিনি মালয়েশিয়ায় গিয়েছেন বলে জানা গেছে।
দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকলেও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরিচুৎ করেনি এমনকি তাকে বরখাস্তও করেননি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এলাকাবাসী ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের কয়েকজন জানান অধ্যক্ষ ও পূর্বের ম্যানেজিং কমিটির যোগসাজশে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে খালিদ হাসানের নিয়োগ হওয়াতে বর্তমান কমিটি তাকে চাকরিচুৎ করছে না।
মানিকনগর ডিএস আমিনিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, পূর্বের কমিটি তাকে নিয়োগ দেওয়ায় বর্তমান কমিটি তার নিয়োগ বাতিল করার ঝামেলা নিচ্ছে না। অধ্যক্ষ বলেন, বিষয়টি তারা মানবিকভাবে দেখছেন। ইতিপূর্বে কারাগারে আটক থাকার কারণে তাকে দুইবার সাময়িত বরখাস্ত করা হয়েছিল। গত বছর তিনি দুই মাস আটক থাকলেও সে সময় তাকে বরখাস্ত করা হয়নি বলে স্বীকার করেননি। কেন করা হয়নি প্রশ্নের উত্তরে তিনি চুপ ছিলেন।
মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম তোতা বলেন, ‘মোটা অংকের টাকার লেনদেনে খালিদ হাসানের নিয়োগের কথাটি আমি শুনেছি। তবে ঘটনাটি আগের কমিটির সময়ে ঘটাতে বিষয়টি সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ ওয়াকিবহল নয়। বর্তমানে খালিদ হাসান দেশে নেই, তার চাকরি বহাল আছে কিনা সেটা আমার সঠিক জানা নেই। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি আমি জানাবো। ‘
মৌলভী তাজউদ্দিন খানের ব্যাপারে রফিকুল ইসলাম তোতা বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাকে সাসপেন্ড করা হবে। তবে গত বছর যখন তিনি আটক হয়েছিলেন তখন তাকে সাসপেন্ড করা হয়নি। আমি ম্যানেজিং কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি মাত্র কয়েকদিন আগে, এখনো এক বছর পূর্ণ হয়নি।
এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে জেলা শিক্ষা অফিসার আব্বাস উদ্দিনকে ফোনে পাওয়া যায়নি।