মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার কোমরপুর বাজারে অভিযান চালিয়ে অনলাইন জুয়ার আরও এক এজেন্ট রাজন আলীকে (২০) আটক করেছে ডিবি পুলিশ। এনিয়ে পুলিশ অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত ২২ হোতাকে আটক করেছে। ফলে অনলাইন জুয়ার দূর্গ তছনছ হতে শুরু করেছে।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মুজিবনগর থানার ওসি মেহেদী রাসেল ও সাইবার ক্রাইম অপরাধ বিভাগের এসআই মনিনের নেতৃত্বে কোমরপুর বাজারের ফিলিং স্টেশনের কাছে থেকে পুলিশের যৌথ টিম তাকে আটক করে। তার কাছে থেকে একটি আইফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ।
রাজন সরদার কোমরপুর গ্রামের ইমদাদুল হক ওরফে ইন্তা সরদারের ছেলে। রাজন রাশিয়ান অনলাইন জুয়া সাইট মেলবেট ও লাইনবেটের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। তার ওয়ার্কার হিসেবে কাজ করে তার ফুফাত ভাই রোহান ওরফে ইয়েন, অর্নব আহমেদ, নুরপুরের আসিফ হাসান। তার চ্যানেলের নাম মেলবেট রাজন নাগাদ ও মেলবেট রাজন বিকাশ।
জানা গেছে, রাজন আলী সরদারের বাবা ইন্তা সরকার ৩ বছর আগেও স্বর্ণকার হিসেবে সোনার গহণা তৈরি করতো। করোনার শুরুর দিকে যখন অনলাইন জুয়ার কার্যক্রম শুরু হয় তখন মেলবেটের একটি চ্যানেল নিয়ে কাজ শুরু করে রাজন আলী। তারপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এর পর কোটি টাকার উপরে বিনিয়োগ করে চোখ ধাঁধানো ডেকোরেশন দিয়ে গড়ে তোলেন রোহান জুয়েলার্সসহ তিনটি জুয়েলারি দোকানের মালিক। প্রায় ১১ লাখ টাকা মূল্যের দুটি মোটরসাইকেল কিনেছেন। যখন যেটা মন চাই তখন সেটা ব্যবহার করেন।
এদিকে, মেহেরপুর প্রতিদিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মেহেরপুর জেলা থেকে দুই শতাধিক এজেন্ট অনলাইন জুয়া সাইটের মাধ্যমে রাশিয়ায় অবৈধ ই-ট্রানজেকশনের মাধ্যমে পাচার করছেন কোটি কোটি টাকা। আর এই অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত মেহেরপুরের সরকার দলীয় কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, মুজিবনগরের প্রভাবশালী এক নেতা, সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের কয়েকজন শীর্ষ নেতা, স্কুল ও কলেজের কয়েকজন শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেনীর প্রায় দুই শতাধিক ব্যক্তি।
অনলাইন জুয়ার এজেন্ট হিসেবে কাজ করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে ময়নদ্দিন ওরফে ময়না মেম্বার নামের এক ইউপি সদস্য। তিনি মহাজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান সদস্য এবং কোমরপুর গ্রামের বাসিন্দা। আনোয়ার হোসেন নামের আরো এক বিকাশের সাবেক কর্মী। তিনি গাড়াডোব গ্রামের মৃত কিয়াম উদ্দিনের ছেলে। মেহেরপুর প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে সেগুলো পাঠকদের সামনে তুরে ধরবে। এছাড়া অনলাইন জুয়ার সংবাদ নিয়ে ইতোমধ্যে জামান উদ্দিন, নরুল ইসলাম ও মাদার আলীর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। তাদের সম্পদের সকল তথ্য মেহেরপুর প্রতিদিনের হাতে এসে পৌছেছে। পরবর্তিতে তাদের সম্পদের খবরও ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে।
কিছু রাজনৈতিক নেতা এবং কয়েকজন সাংবাদিক এসকল জুয়াড়ুদের কাছে থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন। মেহেরপুর প্রতিদিনে ‘অনলাইন জুয়ার দূর্গ’ নিয়ে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের পর থেকে রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিকদের মাসোহারা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ওই সকল নেতা ও সাংবাদিকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে প্রতিদিনই কোটি টাকা পাচার হচ্ছে দেশের বাহিরে। এতে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি বিপথে যাচ্ছেন তরুণ ও যুবকরা।
মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে অনলাইন জুয়া নিয়ে অনুসন্ধান এবং কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে অনলাইন জুয়া নিয়ে উঠে এসেছে নানা তথ্য।
মেহেরপুর অনলাইন জুয়ার দূর্গে হানা দিয়ে মেহেরপুরের ডিবি পুলিশ, মুজিবনগর থানা পুলিশ ও সাইবার নিরাপত্তা বিভাগ কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে ২২ জন অনলাইন জুয়ার হোতাকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। একই সঙ্গে মেহেরপুর প্রতিদিন ধারাবাহিক অনুসন্ধানি প্রতিদেবন প্রকাশ করায় অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িতরা ভিন্ন কৌশল বেছে নিয়েছেন। অনেকে গা ঢাকা দিয়ে জেলার বাইরে গিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন এবং জেলার বাইরে থেকে বিকাশ, রকেট, নগদসহ অন্যান্য কোম্পানীর এজেন্ট সংগ্রহ করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রেফতার এড়ানোর জন্য।
অনলাইন জুয়ার সকল সংবাদ নিচের লিঙ্কগুলোতে
মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার দূর্গে হানা
মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার মাস্টারমাইণ্ড প্রসেনজিৎ সহযোগীসহ আটক
অনলাইন জুয়ার এজেন্ট প্রসেনজিতের সহযোগীদের আদালতে জবাবনবন্দী প্রদান
মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার আরেক এজেন্ট সাদ্দাম আটক
ধরাছোঁয়ার বাইরে অনলাইন জুয়ার অন্যতম চার হোতা মুকুল-জামান-নুরুল-মাদার
অনলাইন জুয়ার হোতা নুরুল ও জামানকে শোকজ
মেহেরপুরের অনলাইন জুয়ার শীর্ষ এজেন্ট শামিম অধরা
অনলাইন জুয়ার এজেন্ট শামিমকে নিম্ম আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
অনলাইন জুয়ার শীর্ষ এজেন্ট শামিম কারাগারে
এবার মেহেরপুর শহর থেকে আটক অনলাইন জুয়ার আরও চার এজেন্ট
মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার আরও এক মাস্টার এজেন্ট পলাশ
মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার আরেক মাস্টারমাইণ্ড সজিব আটক
মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার আরো চার হোতা আটক