মেহেরপুর পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা কিন্তু নাগরিক সেবা কিছু এলাকায় তৃতীয় শ্রেণীর মত। বাসিন্দারা নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। চলাচল করতে পোহাতে হয় দুর্ভোগ। পর্যাপ্ত বা ময়লা আবর্জনা রাখার ডাষ্টবিনের অভাবে সড়কের পাশে দূর্গন্ধময় ময়লা আবর্জনায় স্তুুপ হয়ে পড়ে থাকে। এলাকায় ড্রেনের ব্যবস্থা থাকলেও ড্রেনের পানি নিষ্কাশন হওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। যে কারণে এলাকার মধ্যে চলাচলের রাস্তাটিতে সবসময়ই পানি জমে থাকে। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ময়লা আবর্জনায় ভরা।
অভিযোগ দিলে পৌরসভা থেকে এসে ড্রেন পরিস্কার করে দেয় আর অভিযোগ না করলে কোন খোঁজ পাওয়া যায় না। ফলে নোংরা দূর্গন্ধময় পানি মাড়িয়ে রাস্তায় চলাচল করতে হয়। পৌরসভার ছোট্ট একটি ময়লা আবর্জনা ফেলার ডাষ্টবিন আছে। এলাকার কিছু মানুষ এই ডাষ্টবিন ব্যবহার করলেও ময়লা আবর্জনা দিনের পর দিন পড়ে থাকে।
মেহেরপুর পৌরসভার পল্লী বিদ্যুৎ পাড়া, দিঘিরপাড়ার একাংশ, বন বিভাগ হতে ওয়াপদপাড়া, চক্রপাড়া, টি এন্ড টি পাড়া, হঠাৎ পাড়া, ক্যাশবপাড়ার একাংশ, কাথুলী বাসস্ট্যান্ড পাড়া ও পৌর কলেজ পাড়ার একাংশ নিয়ে গঠিত মেহেরপুর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে ১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি কিন্ডার গার্টেন স্কুল, বন বিভাগ ও বিদ্যুৎ অফিস। ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৩ হাজার ২শত জন। ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর জাফর ইকবাল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৫ নং ওয়ার্ডের কিছু উন্নয়ন হলেও পাড়ার ভিতরের চিত্র ভিন্ন। সড়কে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দর, ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলেও ড্রেনের পানি নিষ্কাশন হয় না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীদের। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে প্রায় সারা বছরই ভোগান্তি পোহাতে হয়।
ড্রেনের দূর্গন্ধময় কাঁদা পানি ও মশা-মাছিতে অতিষ্ঠ জনজীবন। এসকল ড্রেনে দূর্গন্ধময় কাঁদা, পানি ও ময়লা আবর্জনায় ভরা। নিয়মিত ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয় না। বাড়ির ব্যবহৃত পানি অল্পতেই ড্রেনের উপরে উঠে আসে। ড্রেনের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে প্রায় হাটু পানি জমে থাকে।
৫ নং ওয়ার্ডের প্রতিটি পাড়ার একই চিত্র দেখা মেলে। অধিকাংশ এলাকায় বছরের পর বছর ধরে নির্মাণ হয়নি ড্রেন ও রাস্তা।
ওয়ার্ডের নেই ময়লা আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা। এলাকার লোকজন যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার স্তুপ।
হঠাৎপাড়ার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, পাড়ার ভিতরে ড্রেনগুলোর অবস্থা ভালো না। ড্রেনগুলো ঠিকমত পরিষ্কার করে না। ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কোন জায়গা না থাকায় পাশে লোকের জায়গায় আবর্জনা ফেলতে হয়। ড্রেন তৈরী করা হয়েছে কিন্তু ড্রেনের পানি বের হওয়ার পথ নেই। যে কারণে জলাবদ্ধতা হয়ে থাকে সবসময়। নিয়মিত ড্রেনগুলো পরিস্কার করে না। ময়লা ফেলার জায়গা নেই। সামনে ছোট্ট একটা ময়লা ফেলার জায়গা করে দিয়েছে পৌরসভা থেকে সেটাও নিয়মিত পরিস্কার হয়না। ড্রেনের পানি বের হবার ব্যবস্থা না করে ড্রেন নির্মাণ করা ঠিক হয়নি। পাড়ার এই ড্রেনটা যদি পাইপ ড্রেনের সাথে সংযোগ করা হতো তাহলে আমরা এই জলাবদ্ধতা থেকে রেহায় পেতাম।
চক্রপাড়ার হাফিজুল বলেন, আমাদের পাড়ার কোন মা বাপ নেই। আমরা অনেক অবহেলিত। এই পাড়ায় উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। নেই ড্রেন, নেই রাস্তা। বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও কোন কিছুই করা হয়নি। নেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, নেই ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গা। বছরের পর বছর পার হলেও পাড়ার ভিতরের রাস্তাগুলো সংস্কার করা হয়নি
দিঘিরপাড়ার রশিদ আলি বলেন, এই এলাকায় দু-একটা হিয়ারিং রাস্তা ছাড়া কোন উন্নয়ন হয়নি। আগেও যেমন ছিলো এখনও তেমনই আছে। উত্তরপাড়ার মাঠের রাস্তাটার দু’পাশে সামান্য হিয়ারিং হলেও মাঝখানটুকু মাটির রাস্তাই থেকে গেল। এই মাঠে প্রায় দেড় থেকে দুই’শ লোকে আবাদ করে। মাঠের ফসল ঘরে নেওয়ার সময় আমাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাছাড়া কেউ এই এলাকার খোঁজখবর রাখে না। এলাকার দেখভাল না থাকার কারণে রাস্তাটি দখল হয়ে যাচ্ছে।
ওয়ার্ডের উন্নয়ন চিত্র:
এলাকার উন্নয়নের মধ্যে চক্রপাড়ায় জার্মান বাংলার ভিতরে ফ্লাট সোলিং রাস্তা নির্মাণ। ক্যাশবপাড়া মিজানুরের পোল্ট্রি খামার হতে নায়েব বাগান পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ। কবির মিয়ার বাড়ি হতে কালু মন্ডলের বাগান পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ। এতিমখানার পিছনে রাস্তা নির্মাণ। হঠাৎ পাড়া জাহানের বাড়ি হতে মসজিদ পর্যন্ত আরসিসি রাস্তা নির্মাণ। তারিকের বাড়ি হতে পাড়ার শেষ অংশ পর্যন্ত আরসিসি ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ।
মেহেরপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহিনুর রহমান বলেন, ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাফর ইকবাল শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় ওয়ার্ডের দায়িত্বে আছি। এই ওয়ার্ডে বতর্মানে যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো সমাধানের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।