শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়। ২০১৫ সাল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা হয় ১২০০ নম্বরের পরিবর্তে ১৩০০ নম্বরে। শিক্ষাক্রমে ২০০ নম্বরের ঐচ্ছিক কম্পিউটার শিক্ষার পরিবর্তে ১০০ নম্বরের আবশ্যিক ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ ছয়টি শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য।
সরকারের এ উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী বলে মন্তব্য করেছিলেন তৎকালীন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট একাধিক বিশেষজ্ঞ। এতে করে শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রে আরো বেশি স্বাবলম্বী হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মূল যে হাতিয়ার তা হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। আর এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করার জন্য দরকার দক্ষ আইসিটি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ।
দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির জন্য দরকার ব্যবহারিকসহ উপযুক্ত কম্পিউটার শিক্ষা। কিন্তু কম্পিউটার শিক্ষায় ব্যবহারিক বাদ দিয়ে আইসিটির প্রয়োগ সম্ভব নয়। শুরু থেকে আবশ্যিক হওয়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে ব্যবহারিক এবং নম্বর বণ্টন বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনা না থাকলেও এনসিটিবিতে লেখকদের নিয়ে দফায় দফায় মিটিংয়ে।
এ বিষয়ে অবশ্যই প্র্যাকটিক্যাল থাকবে এবং এর জন্য নম্বর বরাদ্দ হলো ২৫, যা মৌখিকভাবে জানানো হলে লেখকরা তাঁদের বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করে এনসিটিবি থেকে অনুমোদন নিয়ে প্রকাশ করেছেন। প্রায় দুই ডজন বই অনুমোদন, পরিপত্র, অফিস নোটিশ ইত্যাদি আরো কত কিছু।
২০১৬ সাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় আইসিটি বিষয়টি সৃজনশীল পরীক্ষার আওতায় আসে। গত বছরের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় আইসিটি বিষয় থেকে প্রশ্ন হয়েছে, শুধু তাই নয় যে কোনো চাকরির ইন্টারভিউ, বিসিএস পরীক্ষায় আইসিটি বিষয় থেকে প্রশ্ন আসে এবং এই ধারা অব্যাহত। চলমান এই বিষয়টি যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গেই চলছিল, হঠাৎ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে আইসিটি বিষয়ের পরীক্ষা হবে না বা বাতিল করা হয়েছে—ফলাও করে প্রচার হচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও হাল ছেড়ে দিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে বিষয়ে পরীক্ষা হয় না সেই বিষয়ে ক্লাসও করতে চায় না; ফলে আইসিটির মতো বিশাল জ্ঞান থেকে পিছিয়ে পড়বে তারা।
অধিকাংশ স্কুল-কলেজে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যা আইসিটি শিক্ষা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে আইসিটি প্রয়োগের জন্য অন্যতম সহায়ক ভূমিকা রাখবে। কিন্তু আইসিটি পরীক্ষা না হলে আগ্রহ হারাবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। সরকারি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত ল্যাবে ল্যাপটপ ও যন্ত্রপাতি অবহেলায় অযত্নে নষ্ট হবে।
২০২০ সালে মুজিব শতবর্ষ পালন উপলক্ষে এনসিটিবি কর্তৃক উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির আইসিটি বিষয়ে বই প্রকাশিত হয়। যা মুজিববর্ষের একটি উপহার। এই বছর শিক্ষার্থীরা ঐ বই পড়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করে প্রচার করা হচ্ছে আইসিটি বিষয়ে পরীক্ষা হবে না। তাহলে কি মুজিব শতবর্ষে প্রকাশিত আইসিটির বোর্ড বইয়ের আলোকে প্রথমবারের মতো আইসিটি পরীক্ষা হবে না? বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
আইসিটি বিষয়ে পাশ পাওয়া অত্যন্ত সহজ এবং জিপিএ উন্নয়নের সহায়ক। সেখানে প্রচার করা হচ্ছে আইসিটি বিষয়টি ছাত্রছাত্রীদের জন্য কঠিন। ব্যবহারিক নম্বর ২৫ থাকায় এ+ নম্বর পাওয়া অত্যন্ত সহজ। কিন্তু মিথ্যা প্রচারণার কারণে এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আজ হুমকির মুখে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ‘এসএসসি ও এইচএসসি-তে আইসিটি বিষয়ে পরীক্ষা হবে না’ এমনটা এখনো প্রস্তাবিত আকারে আছে। যদি তাই হয় তবে প্রস্তাবনা বাতিল করে, পরীক্ষা বাতিল না করে, আইসিটির সংক্ষিপ্ত সিলেবাসকে আরো সংক্ষিপ্ত করে হলেও, মুজিব শতবর্ষের উপহার এনসিটিবির আইসিটি বইয়ের আলোকে প্রথমবারের পরীক্ষাটি, সব বিষয়ের মতো করেই অনুষ্ঠিত হবে—এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক: সহ. অধ্যাপক, আইসিটি, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা