মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার নিত্যানন্দপুর গ্রামে (ট্রেড কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) টিসিবি কার্ড করে দেয়ার নামে প্রতারণা করে গণ হারে চাঁদা আদায়য়ের অভিযোগ উঠেছে ওই গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা বিকাশ মন্ডল নামের এক ব্যাক্তির বিরুদ্ধে।
বিকাশ মন্ডল ধানখোলা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি। গ্রামের দুস্থ ও অসহায়দের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা প্রতারণা হাতিয়ে নেয় নিরঞ্জন মন্ডলের ছেলে বিকাশ মন্ডল। বিকাশ মন্ডলের এই চাঁদা আদায়ে সহায়তা করেন ওই গ্রামের মিখা মন্ডল। অথচ টাকা আদায়ের কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও আজও টিসিবি কার্ড ভাগ্যে জোটেনি চাঁদা প্রদানকারি অসহায়দের কপালে। প্রতি জনের কাছ থেকে নেয়া হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। টাকা উত্তোলনের প্রয়োজনীয় প্রমানাদী সাংবাদিকদের কাছে থাকলেও তা আংশিক অস্বীকার করেন বিকাশ মন্ডল।
জানাগেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় দরিদ্র পরিবারের জন্য সরকার স্বল্প মুল্যে খাদ্য সহায়তা (ট্রেড কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) টিসিবি কার্যক্রম চালু করেন। উক্ত কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে মেহেরপুর জেলায়। এর ধারাবাহিকতায় গাংনী উপজেলয় প্রায় ৩৮ হাজার পরিবার টিসিবির সুফল পাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে।
উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ধারাবাহিক ভাবে টিসিবি পন্য বিতরণ করা হয় পৃথক পৃথক ভাবে॥ গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়নে প্রায় ৪ হাজার পরিবার এর আওতাভুক্ত। অথচ সরকারের এই সফলতাকে পুঁজি করে অসহায় মানুদের কাছ থেকে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত গণহারে চাঁদা আদায় করেন আওয়ামীলীগ নেতা বিকাশ মন্ডল।
সরেজমিনে নিত্যানন্দনপুর গ্রাম ঘুরে জানা যায় বিকাশ মন্ডলের অনেক অবিযোগের কথা। ওই গ্রামের খুশি মন্ডল জানান, টিসিবির কার্ড করে দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে নেয়া হয় ৭৫০ টাকা, মহন মন্ডলের কাছ থেকে নেয়া হয় ৭৫০ টাকা, শুকুমারি মন্ডলের কাছ থেকে নেয়া হয় ৭৫০ টাকা, সমিতা রানীর কাছ থেকে নেয়া হয় ৭৫০ টাকা, মার্থা মন্ডলের কাছ থেকে নেয়া হয় ৭৫০ টাকা, আরতির কাছ থেকে-৭৫০ টাকা, মেরি মন্ডলের কাছ থেকে নেয়া হয় ৭৫০ টাকা, ঝুনু মন্ডলের কাছ থেকে নেয়া হয় ৭৫০ টাকা, মুক্তা মন্ডলের কাছ থেকে নেয়া হয় ৭৫০ টাকা, শুরভির কাছ থেকে নেয়া হয় ৭৫০ টাকা, বিজয় মন্ডলের কাছ থেকে নেয়া হয় ৭৫০ টাকা, চামেলি সরকারের কাছ থেকে নেয়া হয় ৭৫০ টাকা, অঞ্জলির কাছ থেকে নেয়া হয় ৭৫০ টাকা, রতন সরকারের স্ত্রীর সাথে নেয়া হয় ৪ জনের জন্য ৩০০০ টাকা। শুধু নাম প্রকাশ কারিরাই নয়, এভাবে পুরো গ্রাম বাসীরে কাছ থেকেই ৭৫০ টাকা করে আদায় করেন বিকাশ মন্ডল। টাকা নেয়ার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও আজও তাদের ভাগ্যে জোটেনি টিসিবি’র কার্ড। এ নিয়ে গ্রাম বাসীদের মধ্যে দানা বেধেছে ক্ষোভ আর কষ্টের।
নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে গ্রামের অনেকেই জানান, বিকাশ মন্ডল আওয়ামীলীগ নেতার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন কাজের অজুহাতে গ্রামে এভাবে টাকা তোলেন। তার প্রতিবাদ করার কেউ নেই। যদি কেউ প্রতিবাদ করেন তাকে নানা ভাবে হয়রানী করেন বিকাশ মন্ডল ও তার বাহিনীর লোকজন। গ্রামবাসীরা আরও জানান, বিকাশ মন্ডল গ্রামর কয়েকজনকে নিয়ে একটি বাহিনী গঠন করেছে। তাদেরকে নিয়ে নানা অপকর্ম করে পার পেয়ে যাচ্ছে। কেউ তার ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেনা। বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টি দেয়ার দাবী এলাকাবাসীর।
বিকাশ মন্ডল বলেন, আমি টাকা নিয়েছি ঠিকই, তবে ৭৫০ টাকা নয়, ২৫০ টাকা। এ টাকায় যাদের কার্ড রয়েছে তাদের কার্ড পুনরায় অনলাইন করতে হবে। সেই অনলাইন করতে যে টাকা খরচ হয়েছে সে টাকায় নেয়া হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম মস্তফা জানান, ওই গ্রামে টিসিব কার্ড বিষয়ে বিকাশ মন্ডলের দায়িত্ব দিয়েছেন চেয়ারম্যান। টাকা নেয়ার বিষয়টি আমি জানিনা। যদি গরিব মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকে তা খুবই দুঃখ জনক ও অমানবিক।
ধানখোলা ইউপি চেয়ারম্যান মো: আব্দুর রাজ্জাক জানান, টাকা নেয়ার বিষয়টি জানিনা। এমন অভিযোগ পেলে বিকাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা জানান, হত দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে এভাবে টাকা আদায়ের কোন নিয়ম নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।