গুলশান আরা মিরা। বয়স ৩৭। অর্থনীতিতে অনার্স পড়ার সময় আইডিবি-আইটি কোর্স শেষে স্কলারশিপ পেয়েছিলেন। তিন্তু ‘কপালের লিখন না যায় খণ্ডন’ এ প্রবাদটি তার জীবনে মরণগ্রাস হয়ে বাসা বেঁধেছে। ৯ বছর ধরে শরীরের দুটি কিডনি অকেজো হয়ে পড়েছে। সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালসিস করে বেঁচে রয়েছেন এক সময়ের মেধাবী এই শিক্ষার্থী।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের দক্ষিণপাড়ার মৃত রেজাউল হক ও আওলিয়া হক দম্পতির পাঁচ সন্তানের সবচেয়ে ছোট সন্তান মিরা।
২০০৬ সালে প্রাথমিক ভাবে কিডনিতে সমস্যা দেখা দিলে মিরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার পর থেকে মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এ কারণে তাঁর অনার্স শেষ করতেও সময় লাগে। পরে মনের জোরে ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্সও শেষ করেন তিনি। মাস্টার্স শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেশ কিছু দিন চাকরি করেন। এরই মধ্যে খুলনার ফুলতলা এলাকার নাসির উদ্দিন সুমন নামের এক জনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ২০০৯ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
২০১৩ সালে তিনি ক্রোনিক কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে তখন থেকে শুরু হয় ডায়ালসিস। কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ডা. হারুন অর রশিদের তত্ত্বাবধানে সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালসিস করে জীবনযুদ্ধে টিকে আছেন মিরা। এর পর ২০১৭ সালে স্বামী নাসির উদ্দিন সুমনও তাকে ছেড়ে চলে যান এবং অন্যত্র বিয়ে করে সংসার বেঁধেছেন।
গুলশান আরা মিরার এখন একমাত্র অবলম্বন তার মা। চিকিৎসার জন্য ঢাকার মিরপুরের একটি বাসায় সাবলেট নিয়ে বসবাস করছেন মা ও মেয়ে। প্রতিমাসে ডায়ালসিস, টেস্ট ও ওষুধ কিনতে লাগে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। সঙ্গে আছে বাড়ি ভাড়া ও খাওয়া খরচ। সবমিলিয়ে অর্থনৈতিক দৈনতা তার জীবনযুদ্ধে যোগ হয়ে মানবেতর জীবন পার করছেন মিরা।
মিরা জানান, সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালসিস করা প্রয়োজন। যখন তার স্বামী ছিলেন, তখন তিন দিনই করতেন। প্রতি ডায়ালসিসের প্রায় আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়। স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে দুইটা করে ডায়ালসিস নিচ্ছি। চিকিৎসকের কাছে আবেদন করে খরচ একটু কমাতে পেরেছি। স্বামী চলে যাওয়ার পর থেকে ভাইরা তার চিকিৎসার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এভাবে আর কতদিন?
তিনি আরো জানান, ৯ বছরের পুরাতন রোগ হয়ে যাওয়া কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করাও আর সম্ভব না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। যতদিন বাঁচবো ডায়ালসিস করেই বাঁচতে হবে। তবে স্বামী ছেড়ে যাওয়াতেও তার কোন অভিযোগ নেই।
আবেগ আপ্লুত মিরা জানান, যখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট এর করার কথা ভাবলাম। তখন একমাত্র দাতা হিসেবে আমার মা ছিলেন। কিন্তু মায়ের টেস্ট করার পর জানতে পারি তারও একটি কিডনি ছোট। চিকিৎসক জানান, মায়ের কিডনি নিলে হয়তো আপনি বাঁচবেন কিন্তু মা নাও বাঁচতে পারেন। যে কারণে মায়ের কিডনি নিতে পারিনি।
এলাকাবাসী, শুভাকাঙ্খী ও দেশবাসীর কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, ডায়ালসিস আর ওষুধ খেয়েই বেঁচে থাকতে হবে । কিন্তু এই মুহুর্তে আমার সব অবলম্বন শেষ হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক সাহায্য ছাড়া আমার পক্ষে চিকিৎসা চালিয়ে সম্ভব না।
মিরার মা আওলিয়া হক জানান, আমি ছাড়া মেয়েকে আর কে দেখবে ? আমার ছেলেরা যতটুকু পারছে তাকে সাহায্য করছে। তাদেরও সংসার রয়েছে। আজ শনিবার এক আত্মিয় এক হাজার টাকা দিয়ে গেছেন, সেটা নিয়ে ওষুধ কিনবো। মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে টাকা দরকার। কেউ যদি সাহায্যও হাত বাড়িয়ে দিত তাহলে মেয়েটির চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারতাম।
মিরার সাথে যোগাযোগ বা সাহায্য করতে এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। মোবাইল-০১৭১১-৪৫৮৯৬১