সম্প্রতি বাংলাদেশি ১০ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের নামে ফ্রান্সের ভিসা প্রত্যাখানের গুজব মিথ্যা বলে নিশ্চিত করার পর জনসাধারণের আলোচনায় এসেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক আব্দুর রব ভুট্টো। অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে ছড়ানো তার আরও গুজবের তথ্য।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া আলোচিত এসব পোস্টের মধ্যে আছে পুলিশ অফিসারদের নামে মার্কিন স্যাংশননের গুজবটি। সেখানে তিনি বলেন, ‘পুলিশ অফিসারদের নামে মার্কিন স্যাংশন’ শিরনামের ওই পোস্টে তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের ৮ কর্মকর্তার একটি তালিকা নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছে। সেখানে তিনি কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ব্যবহার করেননি। ফ্যাক্টচেক করে দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট এরকম কোন নিষেধাজ্ঞাই দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ের সামনে শেখ হাসিনার উপস্থিতির একটি ভিডিও ফুটেজের কিছু অংশ এডিট করে ফেসবুকে ছড়ান ভুট্টো। এর সঙ্গে যুক্ত কররন কিছু মিথ্যা তথ্য। অথচ শেখ হাসিনা সেখানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন।
ভুট্টো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ান, বাংলাদেশে কয়লা আমদানী কারক প্রতিষ্ঠান সিএমসিকে স্যাংশন দিয়েছে চীন। কারণে প্রতিষ্ঠানটির কাছে বকেয়া ৩ বিলিয়ন ডলার। ফ্যাক্টচেকের অনুসন্ধান বলছে, চীন কোনো স্যাংশন দেয়নি এবং বকেয়ার পরিমাণ ২৯৩ মিলিয়ন ডলার। যা রাষ্ট্রীয় আমদানি সংক্রান্ত লেনদেনেরে ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক। গত বছর নভেম্বরের শেষ দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ায়- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবারো বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর ৯২ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যে তথ্যের কোন ভিত্তিই ছিল না।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বাসিন্দা ভুট্টো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘কটূক্তিমূলক এবং রাষ্ট্রবিরোধী’ পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে দেশে থাকা তার ছোট ভাই ইউপি সদস্য এবং বিএনপি নেতা আব্দুল মুক্তাদির মনুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মনু রাউৎগাঁও ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। বর্তমানে তিনি উপজেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি ভুট্টোর দেশি যোগাযোগগুলো দেখভাল করেন। লন্ডন যাওয়ার আগে, ভুট্টো কুলাউড়া থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক হাকালুকি’ ও ‘বেনীআসহকলা’ পত্রিকায় কিছুদিন কাজ করেন। এ ছাড়া তিনি ঢাকার শীর্ষ নিউজের কুলাউড়া প্রতিনিধিও ছিলেন। বর্তমানে ‘লন্ডন বাংলা চ্যানেল’ নামের একটি ফেসবুক পেজের সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হওয়া ভুট্টোর পোস্টে দেখো যায়, করোনা পরিস্থিতি, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সর্বজনীন পেনশন স্কিম, নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর, বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংকট নিয়ে তিনি গুজব ছড়ান। বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, শামসুল আলম, সাজ্জাত হোসেন, মীর জাহানের মতো ফেসবুক আইডি ও পেইজের সঙ্গে তার যোগাোযাগ ঘনিষ্ট। একটি রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা এক সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের নির্দিষ্ট ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে এসব গুজব ছড়ায়।
গত ৯ অক্টোবর সোমবার নিজের টুইটার একাউন্ট থেকে আব্দুর রব ভুট্টো একটি পোস্ট দেয়। বাংলাদেশ সময় রাত ২ টা ৫০ মিনিটের ওই পোস্টে তিনি জানান, “ফ্রান্সের ভিসা রিফিউজ হয়েছেন সরকারের সুবিধাভোগী হিসাবে পরিচিত ১০ সাংবাদিক। মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার নীতিতে যারা উদ্বিগ্ন ছিলেন রিফিউজ হওয়া সাংবাদিকরা তাদের মধ্যে অন্যতম”। এই পোস্টে ফ্রান্সের ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়া ১০ সাংবাদিকের নামও প্রকাশ করা হয়।
পর দিন দুপুররেই ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই তার এক্স অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করেন। সেখানি তিনি ভুট্টোর পোস্টটি নাকচ করেন । পাশাপাশি ভুট্টো সম্পার্কে পর্যবেক্ষণে বলেন, ভুট্টোর প্রতিদিনের কাজ `মিথ্যা` এবং `গুজব` ছড়ানো। মানুষের জীবনে খেলাধুলা অপরিহার্য। কেউ ফুটবল, কেউ টেনিস, কেউ ব্যাডমিন্টন বা স্কোয়াশ খেলতে পছন্দ করেন। আবার ভুট্টোর মত কিছু লোক আছে যাারা খেলার মত করে সামাজে গুজব এবং মিথ্যা ছড়িয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের একজন উর্ধ্বতন কর্মরর্তা জানান, ভুট্টোর ফেসবুক ও টুইটার অ্যাকাউন্ট মনিটরিংয়ে আছে। ফেসবুকের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। টুইটার এখনও কোনো রেসপন্স করেনি।