আলমডাঙ্গার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মূর্তিমান আতংকের নাম দলিল লেখক বুলবুল। তিনি সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে অফিসে পরিচিত। তিনি অফিসের কোন সরকারি স্টাফ নন। শুধু সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরের খুব কাছের লোক তিনি।
দলিল লেখক হয়েও বুলবুলের ইঙ্গিতে কার দলিলে কত টাকা নেওয়া হবে, কার দলিল আগে রেজিস্ট্রি হবে এটা নির্ধারিত হয়ে থাকে। অল্প বয়সী এই বুলবুলের সামনে অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ দলিল লেখকদেরও কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রচণ্ড ভয়ে সবাই তাকে বড় বাবু বলেও সন্মোধন করে থাকে।
সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গায় মামুন বাবরের যোগদানের পর থেকে ছিন্নমূল থেকে উঠে আসা দলিল লেখক বুলবুল সাব-রেজিস্ট্রারের সুনজরে পড়ে যান। তিনি দলিল লেখা বাদ দিয়ে মামুন বাবরের সেরেস্তার পাশে তার জায়গা হয়। আর এতেই গত তিন বছরে বুলবুল লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক বনে যান। গ্রাম ছেড়ে চলে আসেন আলমডাঙ্গা শহরে। কিনে ফেলেন আনন্দধাম প্রধান সড়কের পাশ ঘেষে একটি বাড়ি।
অফিস সূত্র জানায়, সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে দলিল প্রতি নানা অজুহাতে যে অবৈধ হাজার হাজার টাকা দিতে হয় তা মামুন বাবর নিজে হাতে নেন না। টাকা নেন বুলবুল। অনেকের মতে, বুলবুল দিনভর নিজের পকেটে ভরা সেই টাকার ঠিক হিসেবও দেন না। নিজের কাছেও একটি অংশ রেখে দেন। আবার সন্ধ্যার পর অফিস শেষে অবৈধ আয়ের আরও একটি অংশ পান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দলিল লেখক জানান, গত তিন বছরে বুলবুল কাড়ি কাড়ি টাকা পকেটে ভরেছে। কিন্ত সেই অবৈধ টাকা নিয়ে অফিসের কেউ আপত্তি না তুললেও বুলবুলের হুমকি-ধামকি নিয়ে আপত্তি উঠেছে। দলিল প্রতি অবৈধ টাকা দিতে কেউ একটু কমবেশী করলে তিনি তার দলিল রেজিস্ট্রি করা থেকে বাদ দিয়ে দেন।
এরপর দিনভর বুলবুলের পেছনে ঘুরে ঘুরে দাবি অনুযায়ী টাকা দিয়ে সন্ধ্যা বাদে দলিল রেজিস্ট্রি করাতে হয়। এর হেরফের হলেই দলিল লেখকদের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে থাকেন বুলবুল। বুলবুলের অত্যাচার আতংক ছড়িয়ে রেখেছে পুরো সাব-রেজিস্ট্রি অফিসজুড়ে।
সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরের স্বেচ্ছাচারিতা ও দলিল লেখক বুলবুলের সীমাহীন অত্যাচারের বর্নণা শুনে এর সমাধানে এগিয়ে আসেন উপজেলা চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী। উপজেলার এই সর্বোচ্চ দুই কর্মকর্তার উদ্যেগকেও আমলে নেননি সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবর।
সপ্তাহ পার হলেও তিনি সকালের অফিস দুপুরে আবার কখনও বিকেলে আসা বাদ দেননি। উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী অফিসার বেজায় নাখোশ হয়েছেন মামুন বাবরের ওপর। তারা আইনী পথেই হাটছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন বলেন, “মামুন বাবরকে আলমডাঙ্গায় চাকুরী করতে হলে সকালের অফিস সকালেই করতে হবে। আর তা না হলে তাকে আলমডাঙ্গা ছাড়তে হবে।”