আলমডাঙ্গার হারদী গ্রামের যুবক আলোচিত সবুর হত্যার রহস্য দেড় বছর পর উন্মোচিত হয়েছে। এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামী জামাল উদ্দিন বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দী দিয়ে হত্যা রহস্যের জট খুলতে সহায়তা করেছে। এতে মূল পরিকল্পনাকারী মামলার বাদি হত্যাকান্ডের শিকার সবুরের স্ত্রী সালমার দিকে ইঙ্গিত রয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২২ জুন রাতে নিজ শয়ন কক্ষে সবুরকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। স্ত্রী সালমা পাশের ঘরে থাকলেও ঘাতকরা সবুরকে হত্যা করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় সালমা বাদি হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর একের পর এক মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হতে থাকে। কিছুতেই হত্যা রহস্যের জট খোলে না।
এ সময় তদন্তের ভার পান থানার ওসি (তদন্ত) মাসুদুর রহমান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মামলার মূল রহস্যে ডুবে থেকে তদন্ত করতে থাকেন। অতি গোপনে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসেন দুই আসামীকে। এরপরই চমকপ্রদভাবে এই আলোচিত হত্যা মামলার জট খুলতে সক্ষম হন তিনি।
তদন্তকারী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, শুক্রবার রাতে থানার এসআই সুফল বিশ্বাস ও কনস্টেবল শাহারিয়ার হোসাইন রফিককে সাথে নিয়ে হারদীর গাংপাড়া থেকে কাতব আলীর ছেলে বোমারু জামাল ও একই পাড়ার মেছের আলীর ছেলে কাবের আলীকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবারে বোমারু জামাল এই হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দী দেয়।
সূত্রে জানা গেছে, এক জবানবন্দিতেই আলোচিত সবুর হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়ে পড়ে। মামলার বাদি সবুরের স্ত্রী সালমার অবস্থানও পরিবর্তন হয়ে যায়। তিনি মামলার বাদি থেকে আসামী হতে এখন মাত্র সময়ের ব্যাপার।
সূত্র জানায়, বিয়ের পর থেকেই সবুরের সাথে তার স্ত্রী সালমার সম্পর্ক কখনই ভাল ছিল না। সবুর একেক সময় একেক ব্যবসা করতেন,তিনি রাজনীতির সাথেও জড়িত ছিলেন। আবার কখনও ঢাকায় গিয়ে কোম্পানীতে চাকরী করতেন। কিন্ত তার স্ত্রী সালমা পল্লী বিদ্যূৎ অফিসে চাকরী করতেন। দুজনের দাম্পত্য জীবন এতটাই খারাপ ছিল যে দুজন দুই ঘরে রাত কাটাতেন। সালমা দীর্ঘদিন ধরে সবুরের সাথে ঘুমুতেন না। স্বামীকে তিনি এড়িয়ে চলতেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কলহ দেখা দিত।
সূত্র আরও জানায়, সবুরের সাথে গ্রামের কয়েকজনের ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্বও ছিল। এক সময় সবুরের ব্যবসার পার্টনাররা ও স্ত্রী সালমা গোপনে এক হয়ে যায়। সবুরকে হত্যার পরিকল্পনা চলতে থাকে। পরিকল্পনায় যোগ করা হয় সালমার ব্যক্তিগত ভ্যান চালক হারদী গ্রামের রিবন শেখের ছেলে কিরন শেখকে। এই পরিকল্পনায় নিজেকে যুক্ত করে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কুমারডাঙ্গার আরেক ঘাতক জহির উদ্দিনের ছেলে সফিউদ্দিন।
সূত্র জানায়, হত্যাকান্ডের দিন সালমার ব্যক্তিগত ভ্যান চালক কিরন সন্ধ্যার পর সবুরকে ডেকে মাঠের ভেতর নিয়ে যায়। সবুর কিরনকে বিশ্বাস করেই মৃত্যুর দুয়ারে গিয়ে হাজির হন। ঘটনাস্থলে আগে থেকেই ঘাতকরা উপস্থিত ছিল। সবুরকে নিয়ে যাওয়ার পর তারা সবাই মিলে বিভিন্ন নেশাদ্রব্য গ্রহন করতে থাকে। তারা কৌশলে সবুরকে নানা ধরনের নেশাদ্রব্য খাইয়ে তাকে অচেতন করে ফেলে। এরপর রাত গভীর হলে তারা ধরাধরি করে সবুরকে তার বাড়িতে শয়ন কক্ষে নিয়ে আসে। এ সময় আগে থেকে ওই ঘরেই একটি শার্টারগান রাখা ছিল। সেই শার্টারগান দিয়ে সবুরের মাথায় গুলি চালিয়ে হত্যা করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায় ঘাতকরা। ঘাতকরা পালিয়ে গেলে সবুরের স্ত্রী সালমা প্রতিবেশীদের ডাকাডাকি করে বাড়িতে জড়ো করেন।
জানা গেছে, সবুর হত্যাকান্ডের পর থেকে প্রতিবেশীদের কড়া কৌতুহল ছিল তার স্ত্রী সালমাকে নিয়ে। কিন্ত সালমাই ওই হত্যাকান্ডের বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। চলতে থাকে তদন্ত। তদন্তকারী কর্মকর্তাও পাল্টাতে থাকে। সবুর হত্যার রহস্যের জট খুলতে চ্য়া না। এরপর তদন্তের দায়িত্ব পান থানার ওসি (তদন্ত) মাসুদুর রহমান। তিনি দীর্ঘীদন ধরে তদন্ত চালিয়ে গত বৃহস্পতিবারে সালমার ব্যক্তিগত ভ্যানচালক কিরন ও গাংনীর কুমারডাঙ্গার সফিউদ্দিনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরপর শুক্রবার রাতে হারদী গ্রাম থেকে জামাল ও কাবেরকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠান। এর মধ্যে বোমারু জামাল বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দী দেয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, মামলার ক্লু বের করা সম্ভব হয়েছে। আরও কিছু জানার বাকি আছে। খুব অল্প সময়ের ভেতরে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।