আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসন ও এক ওয়ার্ড সদস্যকে নির্বাচিত করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এই দুই প্রার্থী নির্বাচনে পরাজিত হলে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন জেহালা ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান মাষ্টার।
টাকা ফেরতের বিষয়টি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনা পরদিন ঘটলেও ৩ ডিসেম্বর এলাকায় জানাজানি হয়। এতে জেলাজুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।
জানাগেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত (২৮নভেম্বর)। এ নির্বাচনে জেহালা ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা (৪,৫,৬) আসনে অংশ নেয় সানজিদা খাতুন। এছাড়াও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আব্দুল মজিদ নির্বাচন করেন। পুলিশ প্রশাসন ও প্রিজাইডিং অফিসারদের ম্যানেজ করে বিজয় করে দিতে প্রতিশ্রুতি দেয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হান্নান মাস্টার। এ কারণে সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার সানজিদার নিকট থেকে ৩০ হাজার ও মেম্বার প্রার্থী আব্দুল মজিদের নিকট থেকে টাকা নেয়। টাকা নিলেও দুজনই নির্বাচনে পরাজিত হয়। এ বিষয়টি জানাজানি হলে টাকা ফেরৎ দিতে তৎপর হয় হান্নান মাস্টার।
এ বিষয়ে আব্দুল হান্নান মাষ্টার দাবি করেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হচ্ছে। আমি নোংরা রাজনীতির শিকার। নির্বাচনে বিজয়ের জন্য নয়, স্বেচ্ছায় এই দুই প্রার্থী ক্লাব বাবদ ও কর্মীদের জন্য টাকা দিয়েছিল। আমি টাকা নিতে না চাইলেও তারা জোর করে দিয়েছে। পরে তাদের আমানত (টাকা) আমার ফেরত দিয়েছি।
জেহালা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ বলেন, আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নসহ এক যোগে ১৩ ইউনিয়নের তফসিল ঘোষণার পর আমি ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ায়। তার কয়েকদিন পর আমাকে বিজয়ী করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন জেহালা ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান। বিনিময়ে আমার নিকট থেকে নগত ২০ হাজার টাকা নেন তিনি। গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনার পর আমি ভোটে পরাজিত হয়। রাতে বিষয়টি জানাজানি হলে পরদিন টাকা ফেরত দেন হান্নান মাষ্টার।
অপরদিকে, জেহালা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের সানজিদা খাতুন সংরক্ষিত (৪,৫,৬) নং ওয়ার্ড এর প্রার্থী হিসেবে এই প্রথম নির্বাচনে দাড়ান। তিনি বলেন, আব্দুল হান্নান মাস্টার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ভোটের মাঠে কারো কাছে ভোট চাইতে হবে না। সবাইকে ম্যানেজ করে বিপুল ভোটে বিজয়ী করা হবে। আপনার বিজয় সুনিশ্চিত। আমার নিকট থেকে ৩০ হাজার টাকা আদায় করে। পরে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হলে আমার টাকা ফেরত দেন আব্দুল হান্নান। এদিকে এঘটনা জানাজানি হলে উপজেলাসহ জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ইউপি সদস্যদের নির্বাচিত করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ আদায়ের গুঞ্জনে এলাকায় সরব আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে জেহালা ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান মাষ্টার বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। সমাজের চোখে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এসব কুৎসা রটনা করে আসছে এক শ্রেণির অসাধু লোকজন। দুই প্রার্থী এই প্রতিবেদকের নিকট টাকার নেয়ার পর ফেরত দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানালে তিনি বলেন, আব্দুল মজিদের নিকট থেকে নির্বাচনে বিজয়ী করার জন্য টাকা নেইনি। আমাদের একটা ক্লাব আছে। ওই ক্লাবের উন্নয়নের জন্যেই সে নিজেই ২০ হাজার টাকা দিয়েছিল। পরে আমি টাকাটা ফেরত দিয়েছি। অপর মহিলা প্রার্থী সানজিদা খাতুনও স্বেচ্ছায় এলাকার ছেলেদের জন্য দিয়েছিল। আমি নিতে চাইনি। পরে তার টাকা আমারা ফেরত দিয়েছি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খুস্তার জামিল বলেন, নির্বাচনের পর মানুষ অনেকে অনেক কথায় বলে থাকেন। বিষয়টি আদৌও সঠিক কিনা দেখতে হবে। আমাদের কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। কেউ অভিযোগ করলে তদন্তের পর ঘটনার সত্যতা পেলে সংগঠন থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।