সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় প্রায় ১০ বছর ধরে আটকে আছে আমদহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। সীমানা জটিলতা নিরসন করে ২০১৭ সালে মেহেরপুর পৌরসভার নির্বাচন হলেও এখনও আটকে আছে আমদহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। প্রায় দশ বছর ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন আনারুল ইসলাম। সর্বশেষ ২০১৭ সালে আমদহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পরও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। আসন্ন স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব জায়গাতেই এক প্রকার নির্বাচনি আমেজ তৈরি হলেও আমদহ ইউনিয়ন নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চিয়তা কাটছে না।
জানা গেছে, গত ২০১১ সালের ৯ জুন আমদহ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন হয়। একই বছরের ২৮ জুলাই ওই নির্বাচনে বিজয়ী পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে অনুযায়ী ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই এ পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়। ওই সময় দেশের অন্য পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হলেও সীমানা জটিলতা দেখিয়ে মেহেরপুর পৌরসভা ও আমদহ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা স্থগিত রাখে নির্বাচন কমিশন। পরে সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ ও ২৩ এপ্রিল আমদহ ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ২৫ এপ্রিল মেহেরপুর পৌরসভার নির্বাচন হলেও আমদহ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন তখন স্থগিত করা হয়।
আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমদহ ইউনিয়নের নির্বাচন দাবি করে আমদহ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান হিরা বলেন, আমদহ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অত্যন্ত জুরুরী। বিনা ভোটে দশ বছর ধরে চেয়ারম্যান হয়ে থাকাটা অন্যায়। সাবেক মেয়রের সাথে কারসাজি করে নির্বাচন আটকে রেখেছে। এটা অন্যায়। এছাড়াও নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার ব্যাপরে গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করে জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাচন অফিসার। নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ার ব্যাপাওে তাদেরও দায় বদ্ধতা আছে।
আমদহ গ্রামের মহসিন আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একই চেয়ারে থাকায় ওই চেয়ারম্যান-মেম্বাররা সাধারণ মানুষকে তেমন মূল্য দিচ্ছেন না।
মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া বুলু বলেন, ‘সীমানাসংক্রান্ত জটিলতার দোহাই দিয়ে নির্বাচন স্থগিত থাকলেও এটি তেমন জটিল কিছু নয়। এটা নিরসন হয়ে পৌর নির্বাচন হয়েছে। সীমানা জটিলতা আর নেই। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা চান নির্বাচন হোক। দল মনোনয়ন দিলে আমারও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল আমিন বলেন, ‘গত তফসিলে আমি চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলাম। একটি পক্ষের কূটকৌশলে নির্বাচনটি স্থগিত রয়েছে। শিগগিরই নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।
আমদহ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. কাজী শহিদুল হক বলেন, আমহদ ইউনিয়নে সীমানা জটিলতা আর নেই। বিগত নির্বাচনে তফসিল ঘোষনা হয়েও চেয়ারম্যান আনারুলের কারসাজিতে নির্বাচন স্থগিত হয়েছিল। এখনো পর্যন্ত কোন নির্বাচন হয়নি। চেয়ারম্যান আনারুল যেটা করেছে এটা অন্যায় অনৈতিক।
জনগনের ভোটাধিকার হরণ করেছে সে। জনপ্রতিনিধি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু বিনা ভোটে দশ বছর ধরে ক্ষমতা দখল করাটা যৌক্তিক না। আমি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমদহ ইউনিয়নের নির্বাচন দাবি জানাচ্ছি।
মেহেরপুর পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন বলেন, একই কারণে পৌর নির্বাচন বন্ধ ছিল। নির্বাচন বন্ধ রাখার একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। যারা নির্বাচনকে ভয় পায়। যেহেতু সেই জটিলতা কাটিয়ে পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, আমরা চাই, পাশের এ ইউনিয়নের নাগরিকরাও তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাক।
এ বিষয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান আনারুল ইসলামকে মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে এক বছর আগে তিনি নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, আমদহ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আনারুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে কিছু লোক অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি সুন্দরভাবে ইউনিয়নবাসীর সেবা করে যাচ্ছি। নির্বাচন ঠেকানোর কোনো ক্ষমতা আমার নেই। সরকার চাইলেই নির্বাচন হবে।
জেলা নির্বাচন অফিসার আহমেদ আলী বলেন, আমদহ ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার মধ্যে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে হাইকোর্টে একটি মামলা বিচারাধিন আছে। ২০১৭ সালে মেহেরপুর পৌরসভার বিষয়ে বাদি পক্ষরা মামলাটি তুলে নিয়েছিল। এজন্য পৌর নির্বাচন আমরা করতে পেরেছিলাম। একই সাথে আমদহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষনা করেছিলাম।
কিন্তু হাইকোর্ট থেকে নির্বাচন কমিশনকে একটি নোটিশ প্রেরন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন আমাদের নির্দেশ দেন আমদহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থগিত রাখতে। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত আমরা কোন নির্বাচনের নির্দেশ পাইনি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, আমদহ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন কোন মামলা মোকাদ্দমা থাকার কারনে বন্ধ থাকতে পারে। তারপরও আমি বিষয়টি ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি। কোন আইনগত সমস্যা থাকলে সেটা নিরসন করার চেষ্টা করবো।