দীর্ঘ দিন ধরে ফসিল ফুয়েল বা কয়লা বা তেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে যে পরিমাণ ক্ষতিকারক গ্যাস পরিবেশে ছড়িয়েছে-তার প্রভাবে পৃথিবীর উষ্ণতা বেড়েই চলেছে। আর এর পরিণতিতে আবহাওয়া দিনে দিনে হয়ে উঠছে চরমভাবাপন্ন। তাপমাত্রা বাড়ছে, জঙ্গলে আগুন লাগছে, বেড়ে যাচ্ছে বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগ। এই পরিবর্তনের গতি প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজেন ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ। যার প্রধান লক্ষ্য
থাকবে উষ্ণায়ন হ্রাস। পৃথিবী রক্ষার এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপই নেবে এবারের কপ-২৬ সম্মেলন। পরিবেশে কার্বন নিঃসরণ কমাতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ২০০টি দেশের কর্ম-পরিকল্পনা নির্ধারণেই স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে শুরু হয়েছে কপ-২৬।
কপ-২৬ কী : কপ-কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ। ১৯৯২ সালে এ সম্মেলনের প্রস্তাব করে জাতিসংঘ। ১৯৯৫ সালে প্রথম সম্মেলন হয় বার্লিনে। আন্তর্জাতিক এ গোষ্ঠীর ২৬তম আসর হচ্ছে এবার। ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি) আয়োজিত কপ-২৬ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ৯ থেকে ১৯ নভেম্বর, গ্লাসগোতেই। কিন্তু সে বছরের ২৮ মে কপ ব্যুরো ওই তারিখ পিছিয়ে এ বছরের ১ থেকে ১২ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়। অবশেষে সেটি শুরু হলো ৩১ অক্টোবর, নির্ধারিত তারিখের এক দিন আগেই।
কী চাইতে পারে আয়োজক ব্রিটেন : কপ-২৬ এর প্রেসিডেন্ট ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী অলোক শর্মা। গত ৮ জানুয়ারি তাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। আয়োজক দেশ হিসাবে ব্রিটেন চাইবে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমাতে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য নির্গমনের জন্য পুরো দেশ যেন নতুন করে অঙ্গীকার করে। তা ছাড়া, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ, পেট্রলকার এবং পরিবেশ রক্ষায় দেশগুলোর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার আশা করবে আয়োজক ব্রিটেন।
কী নিয়ে উত্তপ্ত হতে পারে সম্মেলন : ভুক্তভোগী দেশগুলোর এ দাবি নিয়ে
প্রচুর তর্কবিতর্ক হতে পারে সম্মেলনে। ২০০৯ সালে ধনী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ১০ হাজার কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির আশপাশে নেই তারা। তোপের মুখে থাকতে পারে জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর কয়েকটি। বিশেষ করে চীন। কারণ এই দেশটিই জলবায়ু সংকট সৃষ্টির জন্য ৮০ শতাংশ দায়ী। চাপের মুখে জীবাশ্ম জ্বালানি ওপর নির্ভরতা কমাতে কতটা নমনীয়তা দেখাবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। এ ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর কারণে জলবায়ু সংবটে পড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর দাবি করা ক্ষতিপূরণ আদায়ের স্পষ্ট নির্দেশনা আশা করতে পারে দেশগুলো।
আসবে নতুন নতুন ঘোষণা : সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বেশির ভাগ দেশেরই লক্ষ্য যখন কার্বন নিঃসরণ, তখন এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নেওয়া পরিকল্পনাগুলোই বলে দেবে তারা সঠিক পথে আছে কিনা। ১২ দিনব্যাপী এ সম্মেলন থেকে নতুন নতুন ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অগ্রগতি বিষয়েও আসতে পারে অন্য কোনো নির্দেশনা। জলবায়ু পরামর্শক ও কর্মীদের নানা প্রস্তাবনা অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর জন্য নীতিমালায় সংশ্লিষ্ট করার পরামর্শ কিংবা নির্দেশনাও থাকতে পারে।
যেমন, জীবাশ্ম জ্বালানি পরিহারে বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং জ্বালানিবিহীন যানের (সাইকেল) ব্যাপক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহার থেকে সরে আসা, সবুজায়ন তথা বনায়ন বৃদ্ধির তাগিদ, উপকূলীয় মানুষ, সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ।