পরিস্থিতির উন্নতি বলা হলেও ১৯ এপ্রিল নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৫২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুর তালিকায় দিনটিতে আমেরিকায় আরও সাত জন বাংলাদেশির নাম যোগ হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৭৪ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হলো। লকডাউনের সীমাবদ্ধতার কারণে তথ্য সংগ্রহে সমস্যা হওয়ায় বাংলাদেশিদের মৃত্যুর এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করেন।
১৯ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া ওই সাত বাংলাদেশি হলেন-এনওয়াইপিডি ট্রাফিক সেকশন কমান্ডার মোহাম্মদ মুজিব চৌধুরী, এবাদ হোসাইন, মো. আলী, হাফেজ আহমদ মোল্লা, তালেব আহমেদ চৌধুরী, খন্দকার মোসাদ্দিক ও আলী সাদেক।
এদিকে আমেরিকায় লকডাউন তুলে নেওয়ার দাবিতে মানুষ রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে। অন্যদিকে প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত আমেরিকা। দেশটিতে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হতে হতে এরই মধ্যে ৪০ হাজার পেরিয়ে গেছে। প্রতি মুহূর্তেই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। তবে নিউইয়র্কের হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা কমছে। গড়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও কমছে। উন্নতির এ ধারা ধরে রাখার জন্য জোর চেষ্টা প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
নিউইয়র্ক নগরীর মেয়র বিল ডি ব্লাজিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কী হচ্ছে এসব? এ নগরীর প্রতিটা সুবধা গ্রহণ করেছেন কিন্তু নিউইয়র্ক নগরীর প্রয়োজনের সময়ে আপনি কোথায়?’ তিনি বলেন, যে নগরীতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বড় হয়েছেন, যে মানুষদের নিয়ে বেড়ে উঠেছেন তাঁদের রক্ষা করতে তিনি ব্যর্থ হচ্ছেন।
১৯ এপ্রিল নতুন প্রণোদনা তহবিলের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাঁর প্রভাব কাজে লাগানোর আহ্বান জানান বিল ডি ব্লাজিও। মার্কিন কংগ্রেস ও সিনেটে আইনপ্রণেতারা এর মধ্যেই আরেক দফা প্রণোদনা তহবিল নিয়ে কথা বলছেন।
নিউইয়র্কের রাজ্য গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোসহ মেয়র ব্লাজিও নিউইয়র্কের জন্য ফেডারেল সরকারের বর্ধিত সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। নিউইয়র্ক খুলে দেওয়ার আগে প্রয়োজনীয় ফেডারেল সাহায্য নিশ্চিত করার জন্য রাজ্য ও নগর নেতারা বারবার আবেদন জানাচ্ছেন। মেয়র জানিয়েছেন, নগরজুড়ে করোনা পরীক্ষার আওতায় আসা লোকজনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ৪২ থেকে ৩৮ শতাংশে নেমেছে ঠিকই। তবে সরকারি ল্যাবে পরীক্ষায় আসা লোকজনের মধ্যে সংক্রমণের হার ৭২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
নিউইয়র্কে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি-অবনতি নিয়ে মিশ্র তথ্য দিয়েছেন মেয়র ডি ব্লাজিও। তিনি বলেছেন, সামাজিক দূরত্ব এখনো আমাদের কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।আদেশ না মানলে জরিমানা করা হবে। আদেশ লঙ্ঘনকারীদের তথ্য জানানোর জন্য তিনি নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে আমেরিকার নানা প্রান্ত থেকে আসা ১ হাজার ৪০০ স্বেচ্ছাসেবী নিউইয়র্কে কাজ করছেন রাজ্যের ৪০টি হাসপাতালে। মার্কিন সেনাবাহিনীর ৫৩৫ জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও নগরীর হাসপাতাল ও নার্সিং হোমে কাজ করছেন। ১৯ এপ্রিল জানানো হয়েছে, নগরীর পাঁচ বরোর হাসপাতালে ৩৪ হাজার ৬০২ জনের চিকিৎসা চলছে। ১৯ এপ্রিল মৃত্যুর তালিকায় ৫২৮ জনের নাম যুক্ত হয়ে নগরীতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৭১২ জনে। এর মধ্যে ৮ হাজার ৮১১ জনের করোনায় নিশ্চিত মৃত্যু এবং ৪ হাজার ৪২৯ জনের সম্ভাব্য করোনায় মৃত্যু হয়েছে বলে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আমেরিকায় এ পর্যন্ত সাত লাখ ৬৪ হাজার লোক করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার ৫৬৫ জন মানুষের।
১৯ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার বলেন, তিনি দ্রুত সবকিছু খুলে দেওয়ার পক্ষে। কোনো কোনো রাজ্য গভর্নর সামাজিক দূরত্বের নামে বাড়াবাড়ি করছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। আমেরিকার বিভিন্ন নগরীতে লকডাউনের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বিক্ষোভকারীদের প্রতি প্রচ্ছন্ন সহানুভূতি দেখিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমি সবার সঙ্গেই আছি। সূত্র-প্রথম আলো