নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই মেহেরপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ১১ তলা ভবনের উদ্বোধন আজ (১২ নভেম্বর) রবিবার।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর-১ আসনের এমপি ফরহাদ হোসেন আজ বিকাল ৩টায় এ ভবন উদ্বোধন করবেন। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগ মুহুর্তে তড়িঘড়ি করে এ উদ্বোধনকে ঘিরে চলছে অসন্তোষ ও সমালোচনা।
১১ তলা ভবনের সবে মাত্র ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয় ৬ তলার। ৭ম ও ৮ম তলার কাজ চলমান। বাকি ৯ম, ১০ম ও এগারো তলার কোন কাজের টেণ্ডার এখনো হয়নি। যে ৬ তলার কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে এখন পর্যন্ত আসেনি কোন আসবাবপত্র কিংবা হাসপাতালের যন্ত্রাংশ।
গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালের নতুন ভবন পরিদর্শন করে এসব চিত্র দেখা গেছে। উদ্বোধনের জন্য তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন ফলক সাটানো হয়েছে। সেখানে দৃষ্টিনন্দনের কাজ চলছে। ভবনে ওঠানামা করার জন্য র্যাম্প সিড়ি, সাধারণ সিড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। চারটি লিফট স্থানের স্থান নির্ধারণ করা আছে এর মধ্যে পশ্চিম পাশে দুটি স্থাপনের কাজ চলছে। পূর্ব পাশে দুটি লিফটের স্থান ফাকা রয়েছে। ভবন উদ্বোধন করার পর সেখানে লোকজনের আনাগোনা শুরু হলে দুর্ঘটনা সম্ভাবনা রয়েছে।
হাসপাতালের ৭ম তলায় কাজ করছেন জাকাউল্লাহ এন্ড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার কোরবান আলী জানান, আমরা ৭ম তলায় কাজ করছি। ৭ম তলার কাজ শেষ করতে এখনো দুই মাসের অধিক সময় লাগবে।
ভবনের স্যানিটারি, পানিসহ অন্যান্য ফিটিংসের কাজ করেছেন জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এক মিস্ত্রি। তিনি বলেন, ৬ তলা পর্যন্ত প্লাম্বিং, স্যানিটারি, ইলেকট্রিকসহ ফিটিংসের সকল কাজ শেষ হয়েছে। সাত তলা ও আট তলায় প্লাস্টারের কাজ চলছে। কনস্ট্রাকশনের কাজ শেষ হলে আমরা ওই সকল ফ্লোরগুলোতে কাজ শুরু করবো।
হাসপাতাল এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে এ ভবন উদ্বোধন করছেন প্রতিমন্ত্রী সাহেব। যে ভবনের কাজ এখনো ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। মানুষের সাথে তিনি উন্নয়নের নামে প্রতারণা করছেন। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া কাজ তিনি দ্রুত করার নির্দেশ দিতে পারতেন অথবা তদারকি করে দ্রত কাজ শেষ করে উদ্বোধন করতে পারতেন। তাহলে মেহেরপুরবাসী উপকৃত হতো।
এ ব্যাপারে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, উনি (প্রতিমন্ত্রী) উনার নামটা রেখে যেতে চাচ্ছেন। এটা তদারকি করে অনেক আগেই নির্মাণ কাজ শেষ করাতে পারতেন। মনোনয়ন টিকিয়ে রাখার চেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি তফসিল ঘোষণার আগে এ কাজ করছেন।
মেহেরপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জমির মো: হাসিবুস সাত্তার বলেন, ১১ তলা বিশিষ্ট পুরো ভবনের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৭৫ কোটি টাকা। পুরো কাজ শেষ না হওয়ায় হাসপাতালকে এখনো ভবন হস্তান্তর করা হয়নি। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশে ভবন উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা করতে হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, নতুন ভবনের জন্য ইতোমধ্যে গণপূর্ত বিভাগে নির্দিষ্ট শাখায় আসবাবপত্র ও অন্যান্য সামগ্রীর চাহিদা পাঠানো হয়েছে। নতুন ভবনের জন্য কোন আসবাবপত্র আসেনি। ভবন উদ্বোধন হলে আপাতত বহির্বিভাগটা স্থানান্তর করার চিন্তাভাবনা করছি।
মেহেরপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শম্ভুরাম পাল বলেন, ভবনটি ১১ তলা হলেও প্রকল্প পাশ হয়েছে ৮ তলার। বাকিটা দরপত্র এখনো হয়নি। ৮তলায় ৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ৬তলা পর্যন্ত সকল কাজ শেষ হয়েছে। হাসপাতালের যন্ত্রাংশ স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আসবে। সেগুলো আসতে সময় লাগবে। তবে উদ্বোধন হলেও আমাদের কাজ করতে অসুবিধা হবে না। হাসপাতালের পুরাতন বেড ও আসবাব দিয়ে আপাতত সেখানে কাজ চালিয়ে নিতে পারবে।