কুষ্টিয়ায় হু হু করে বাড়ছে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও পিসিআর ল্যঅব এবং সিভিল সার্জন সুত্রে জানা যায়, ৮৯২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৪৫ জনের শরীর নতুন করে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।
শনিবার রাতের কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক কার্যালয় সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, শনিবার (১০ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত সেখানে ৪২২ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন।
শয্যাসংকটের কারণে অতিরিক্ত রোগীরা হাসপাতালের মেঝে, করিডর এবং বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীর ভিড়ে সেখানেও পা ফেলার জায়গা নেই। গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।
কুষ্টিয়া করোনা হাসপাতালে ২০০ শয্যার বিপরীতে ৪২২ রোগী রয়েছেন। দেখা দিয়েছে শয্যাসংকট। হাসপাতালে বর্তমানে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ২২২ রোগী মেঝে, করিডর এবং বারান্দায় ভর্তি রয়েছেন।
তবে অক্সিজেনসহ পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকলেও জনবল ও জায়গার অভাব। এ জন্য চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ সংশ্লিষ্ট সবাই চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এমএ মোমেন।
কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এমএ মোমেন বলেন, শনিবার দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলেন ৪২২ জন। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত রোগী ছিলেন ১৯২ জন ও করোনা সন্দেহ রোগী ছিলেন ১৩০ জন।
তিনি বলেন, কুষ্টিয়ায় করোনা হাসপাতাল হওয়ার পর একসঙ্গে ৪২২ জন রোগী ভর্তি এই প্রথম। এর আগে ২০০ রোগীর কাছাকাছি ভর্তি হয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে যে পরিমাণ রোগী ভর্তি হচ্ছে, তা আগে কখনো হয়নি। এত রোগীর চাপ সামলাতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, অক্সিজেন সিলিন্ডার পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। কিন্তু আয়া, সুইপার, পিয়ন ও ফান্ডের অভাব রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। রোগীর চাপ দেখে মনে হচ্ছে আরও শয্যা বা ইউনিট বাড়াতে হবে। চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।
শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, রোগীর ভিড়ে হাসপাতালের কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। অক্সিজেনসহ পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকলেও জনবল ও জায়গার অভাব রয়েছে। এ জন্য চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
জরুরি বিভাগের সামনে একটি ট্রাক থেকে কয়েকজন শ্রমিককে অক্সিজেন সিলিন্ডার নামাতে দেখা যায়। সিলিন্ডার নিয়ে তারা দ্বিতীয় তলায় ওঠে যান। সেখানে ভিড় ঠেলে কোনোরকমে একটি ওয়ার্ডে প্রবেশ করেন। সেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা চলছে। বাইরের কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সিঁড়ি থেকে ওয়ার্ডের প্রবেশমুখ পর্যন্ত শতাধিক মানুষ গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন।
ওয়ার্ডের ভেতরে যেতেই চোখে পড়ল মেঝে ও বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক রোগী। ওয়ার্ডের ভেতরে কয়েকটি কক্ষ। সব জায়গাই রোগীতে ঠাসা। কোথাও শয্যা ফাঁকা নেই। রোগী ও রোগীর স্বজনদের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, করোনা এভাবে বাড়তে থাকলে কোনো সিস্টেমই কাজে আসবে না। তখন অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যাবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যা ঘটেছে। এ জন্য আমাদের সবার সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।
জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেন, কঠোরভাবেই বিধিনিষেধ পরিপালন করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিনই জেলা-উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে।