ঈদের কেনাকাটার জন্য ঘর ছেড়ে মার্কেটে বেরিয়ে এসেছে কুষ্টিয়া শহরবাসী। মহামারি করোনাভাইরাসের ভয় উপেক্ষা করে নানা বয়সী মানুষের ভীঢ় পরিলক্ষিত হয়েছে শহরের বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্স ও বিপনী বিতানগুলোতে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় সকাল ১০টার আগেই মার্কেটের সড়কগুলোতে যেন মানুষের ঢল নামে। সরকারিভাবে কেনাকাটা সীমিত পরিসরে করার নির্দেশনা দেওয়া হলেও কোনও মার্কেটেই ক্রেতা বা বিক্রেতারা তা মানছেন না।
সোমবার (১১মে) সকালে কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন সড়কে এবং মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরকে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে।
কিছু দোকান বিপণিবিতান শপিং মলের সামনে সাবান পানি হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা থাকলেও মানুষ তা ব্যবহার করছে খুব কম।
কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্র এনএস রোডে যান চলাচল সীমিত করা হয়েছে। মানুষ পায়ে হেঁটে কেনাকাটা করছে। এতে করে আবার ভোগান্তীতে পড়েছে মানুষ।
মজমপুর থেকে বড়বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কে কোন রিকশা ও ইজিবাইক চলতে দিচ্ছে না প্রশাসন। ফলে মানুষ বাধ্য পায়ে হেটে চলাচল করতে হচ্ছে।
বাবলু রহমান নামের এক ব্যবসায়ী শহরের পৌর বাজারে এসেছেন। এক বস্তা চালসহ নিত্যপয়োজনীয় বাজার নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। কোন রিকশা না থাকায় সেসব নিয়ে বাসায় যাবে কিভাবে এ নিয়ে ক্ষোব প্রকাশও করেন তিনি।
গতকাল রোববার (১০মে) থেকে কুষ্টিয়া শহরে শুধু জুয়েলারি দোকান ছাড়া সকল দোকানপাট খুলেছে। সকাল ১০টা থেকে চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত। সকাল থেকে শুধু তৈরি পোশাক কিংবা জুতা-স্যান্ডেলের দোকানই নয় রড-সিমেন্টসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সব দোকানই খোলা দেখা রয়েছে।
বেচা-কেনার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা শারীরিক দূরত্বও কেউ রাখেননি। মানেনি হাতে হ্যান্ড গ্লােভস ও মুখে মাস্ক পরার নির্দেশনা।
পছন্দের পোশাক, জুতা-স্যান্ডেল ও কসমেটিকসসহ অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য ক্রেতাদেরকে একেবারে গা ঘেঁষাঘেঁষি এমনকি ঠেলাঠেলিও করতে দেখা গেছে। অনেকে তাদের শিশু সন্তানদেরকেও সঙ্গে এনেছিল।
দোকানদারদের হাঁক-ডাকও করতে দেখা গেছে। মার্কেট করতে আসা মানুষের মধ্যে করোনার ভয় একেবারের লক্ষ্য করা যায়নি। তবে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের ভীড় বেশি দেখা গেছে।
শিশু সন্তান সাথে নিয়ে মার্কেট করতে আসা রাশিদা বানু জানান, আমি বাচ্চা নিয়ে শপিং করবো বলেই এসেছি। বড়দের জন্যও ঈদের জন্য শপিং করছি। মাস্ক পরে থাকলেও তবে আপনি কেন হ্যান্ড গ্লোভস পরেননি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন বিষয়টি আমি জানতাম না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ সদস্য জানান, আমরা ভিড় ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছি। প্রধান সড়ক এনএস রোড যানজট মুক্ত রাখতে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কিছু সড়কের মোড়ে যানবাহন ছাড়া শুধু মানুষ ঢুকতে পারছে।
দোকান মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সিনিয়র সহসভাপতি এস এম কাদেরী শাকিল বলেন, শহরের প্রধান সড়ক এনএস রোডে কোনরকমেই রিকশা ও অটো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে। এতে করে অনেকেরই অসুবিধা হচ্ছে। বিশেষ করে পরিবেশকদের গাড়ী ভেতরে ঢুকতে না পারায় দোকানে মালামাল সরবরাহ পারছে না।
তিনি আরও জানান, ওষধ বাদে সবকিছুর দোকান সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলার রাখার জন্য আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। এছাড়াও শিশুদের সাথে করে মার্কেটে না আসার অনুরোধ করছি এবং সরকারী নির্দেশনা মানার জন্য আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি।
উল্লেখ্য, করোনার সংক্রমণ রোধে গেল ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এতে সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলার সঙ্গে সঙ্গে দোকান-পাট ও বিপণিবিতানগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। পঞ্চম দফা সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে তা করা হয় ১৪ মে পর্যন্ত। এরমধ্যে সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হলো ঈদ মার্কেট।
কুষ্টিয়ায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ২০ জন।