কুষ্টিয়ায় বেসরকারি টেলিভিশন এশিয়ান টিভির স্টাফ রিপোর্টার, টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সত্য খবর পত্রিকার সম্পাদক হাসিবুর রহমান রিজুর (৪৬) ওপর হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা।
গতকাল বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে কুষ্টিয়া শহরসংলগ্ন হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের হাটশ হরিপুর বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলায় হাসিবুরের দুই পা, দুই হাত ও মাথায় গুরুতর জখম হয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার শেষে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার রাত সাড়ে আটটার দিকে ঢাকায় পাঠানো হয়। এদিকে এ ঘটনায় বাবর আলাদা নামে একজনকে আটক করেছে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ। এছাড়াও অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছ তারা।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে রাতেই কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের নেতা-কর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি আল মামুন সাগর, সাধারণ সম্পাদক আবু মণি জুবায়েদ ও কুষ্টিয়া টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনিসুজ্জামান ডাবলুর সঙ্গে বৈঠক করেন। সাংবাদিক নেতারা দোষীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের সময়সীমা বেঁধে দেন ও কুষ্টিয়া মডেল থানায় গিয়েও বিক্ষোভ করেন। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তার আশ্বাসে সাংবাদিকেরা তাঁদের কর্মসূচি স্থগিত করেন।
পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসিবুর বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় ৮ থেকে ১০ যুবক তাঁকে ঘিরে ধরেন। তাঁদের হাতে থাকা হকিস্টিক ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকেন। মাটিতে ফেলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট দুই পা, দুই হাত ও মাথায় আঘাত করেন। শরীরের বিভিন্ন জায়গায়ও হকিস্টিক দিয়ে পেটানো হয়। এ সময় আরও ১৫ থেকে ২০ জন যুবক-কিশোর মারধরকারীদের ঘিরে রাখেন। বাজারে থাকা লোকজন এগিয়ে আসার সাহস পান না।
খবর পেয়ে পুলিশ ও হাসিবুরের স্বজনেরা গুরুতর জখম অবস্থায় হাসিবুর রহমান রিজুকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করানো হয়।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা: তাপস কুমার সরকার বলেন, হাসিবুরের দুই পা, দুই হাত ও মাথায় আঘাতে জখম হয়েছে। মাথায় চারটি সেলাই পড়েছে। দুই পা থেঁতলানো। বাঁ হাতের রক্তনালি কেটে গেছে। এটা গুরুতর। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাতাড়ি মারধর রয়েছে। তাঁর অবস্থা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
রাত সাড়ে আটটার দিকে হাসিবুরকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয়। হাসপাতালে কুষ্টিয়ায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা ভিড় করেন।
এদিকে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নেওয়ার সময় হাসিবুর সাংবাদিকদের কাছে ঘটনায় জড়িত কয়েকজনের নাম বলে গেছেন। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। হাসিবুর বলেন, হামলাকারীর মধ্যে রয়েছে হাটশ হরিপুর এলাকার শিপন, আসলাম, মুরাদ, ফারুক, সাজ্জাদসহ আরও ১০ থেকে ১৫ জন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, পুলিশের কর্মকর্তারাও হাসিবুর রহমান রিজুর দেওয়া নামগুলোর প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন। হামলার পেছনে পারিবারিক বা এলাকাভিত্তিক কোনো বিরোধ থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে রাতে হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের বোয়ালদহ এলাকার মৃত: আকবর আলীর ছেলে মো: বাবর আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা।