কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার কৃষক হানিফ আলী খামারুর হত্যা মামলায় হানিফের স্ত্রী সহ ৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে কুষ্টিয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক অরূপ কুমার গোস্বামী এ রায় দেন।
দ-প্রাপ্তরা হলেন- ভেড়ামাা উপজেলার আড়কান্দি এলাকার লরু প্রামাণিকের ছেলে শ্যামল প্রামাণিক (২৭), বাদশা আলীর ছেলে আসমত আলী ম-ল (৪৭), মিরাজ উদ্দিনের ছেলে মুকুল হোসেন (২৮) এবং নিহত হানিফ আলীর স্ত্রী দোলেনা বেগম (৪২)।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ১০/৪/২০১৭ খ্রিঃ তারিখ রাত ১.০০ টায় আসামি মুকুল, আসমত এবং শ্যামলের সহায়তায় ঘটনাস্থল মাধবপুর মৌজার আবুল মাস্টারের পতিত জমিতে মুকুল প্রথমে কৃষক হানিফ খামারুর গলায় গামছা পেঁচিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর আসামি আসমত দুই পা চেপে ধরে। আসামি শ্যামল তার বুকে চেপে ধরে। অতঃপর আসামি মুকুল একটি ছোরা দিয়ে তাকে গলায় নৃশংস ভাবে পোঁচ দিয়ে হত্যা করে। আসামি মুকুল ব্যবহৃত ছোরাটি আসামি আসমতকে দিয়ে দেয়। তারা ৩ জন মরদেহ উক্ত স্থানে ফেলে রেখে চলে আসে।
পরের দিন সকালে হানিফ বাড়িতে ফিরে না আসায় তার স্ত্রী দোলেনা বেগম, তার চাচাতো ভাই মুকুল সহ অন্যরা খোঁজ করে এবং বাদী আমিরুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে খবর দেয়। তখন বাদী দিনাজপুর নুরিয়া দরবার শরীফে কর্মরত ছিল। সে বাড়িতে ফিরে এসে মামলা দায়ের করেন।
ঘটনা তদন্তে জানা যায় যে, গত ০৬/০১/২০১৭ খ্রিঃ তারিখ ৫.৪৫ টায় আরকান্দি মন্ডলপাড়ায় একটি মারামারির ঘটনা ঘটে। উক্ত মারামারির ঘটনায় মো. ইয়াসিন আলী প্রামাণিক ও তার পুত্র ময়নুল প্রামাণিক গুরুতর জখম হয়। উক্ত ঘটনায় ভেড়ামারা থানায় মামলা নং-২, তারিখ ০১/০৮/১৭ খ্রিঃ দাখিল হয়। এই মামলায় ইয়াসিন আলী ও তার পুত্র ৯/১০ দিন রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসা নেয়ার পর ইয়াসিন আলী মারা যায়। এই ইয়াসিন আলী মারা যাওয়ার ঘটনায় মুকুলের ভাই সহ প্রায় ১৫ জন আসামি হয়। যেহেতু মুকুল ও তার আত্মীয় স্বজন এই হত্যা মামলায় আসামি হয়, সেহেতু এই মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এবং ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য তারা হানিফকে হত্যা করে। পরবর্তীতে মৃত হানিফ খামারুর হত্যাকে অন্যখাতে প্রবাহিত করার পূর্বে এই মামলা রুজুর প্রেক্ষাপটে সিডিআর, কললিস্ট ও তাদের কথোপকথন শুনে তদন্তপূর্বক আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ভেড়ামারা থানার অভিযোগপত্র নং-৯২, তারিখ ১৫/৬/১৭ খ্রিঃ দাখিল করেন।
কুষ্টিয়া কোর্টের পিপি এ্যাড. অনুপ কুমার নন্দি জানান, পেনাল কোডের ৩০২ ধারায় আদালত লরু প্রামাণিকের ছেলে শ্যামল প্রামাণিক (২৭), বাদশা আলীর ছেলে আসমত আলী ম-ল (৪৭), মিরাজ উদ্দিনের ছেলে মুকুল হোসেন (২৮) দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদ-ের আদেশ দেন। অপর আসামি মৃত হানিফ আলীর স্ত্রী দোলেনা বেগম (৪২) কে পেনাল কোডের ৩০২/১০৯ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদ-ের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন এ্যাড. আবু জাফর সিদ্দিকী ও মোছা. আয়েশা সিদ্দিক।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি