কুষ্টিয়ায় চলছে তিন দিনব্যাপী লাঠিখেলা। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শতাধীক লািঠয়ালদের নিয়ে এ উৎসব আজ মঙ্গলবার সমাপনী ঘটবে। তবে দিন গড়িয়ে রাতেও চলবে এ লাঠিখেলা উৎসবের।
ঢাক, ঢোল আর কাঁসার ঘণ্টার শব্দে চারপাশ উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বাদ্যের তালে নেচে নেচে লাঠি খেলে অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে লাঠিয়ালরা। তারপরই চলে লাঠির কসরত। প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা ও তাকে আঘাত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন লাঠিয়ালরা। এসব দৃশ্য দেখে আগত দর্শকরাও করতালির মাধ্যমে উৎসাহ যোগায় খেলোয়াড়দের।
কখনও খেলা চলেছে দুজনে, কখনো আবার দলবদ্ধভাবে। ছিলেন যেমন প্রবীণ সর্দার, ছিলেন নবীনও। অপরূপ এসব কৌশল মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেছে। বাঁশের তৈরি লাঠি ছাড়াও পুরো বাঁশ দিয়েও খেলার কৌশল দেখান অনেক ওস্তাদ।
হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে নিয়মিত এই ধরনের আয়োজন করার দাবি করেন দর্শকরা।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের কবুরহাট গ্রাম। এ গ্রামেরই ইউনুস মাহমুদ অর্পণ নামের ব্যক্তির প্রচেষ্টায় চতুর্থ বারের মতো তিন দিনের এ লাঠি খেলা উৎসবের আয়োজন করে।
তিনি জানান, বাংলাদেশে ইতিহাস-সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বাঙালির রক্তে মিশে ছিল ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা, যা কালের বিবর্তনে এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তিনি বলেন, আমার ইচ্ছে ছিলো এসব লাঠিখেলা টিকিয়ে রাখতে তাদের উৎসাহ দিতে হবে। এজন্যই আমি চেষ্টা করি প্রতি বছর তাদের একত্রিত করে তিনদিনের এ উৎসবের আয়োজন করতে। স্থানীয়দের সহযোগীতায় লাঠিখেলার পাশাপাশি গ্রামীণ ঐতিহ্য নিয়ে ছিলো কলাপাতায় খানাপিনা। তবে এ ধারা অব্যহত রাখতে আমি প্রতিবছর এ লাঠিখেলার আয়োজন করবো বলেও জানান তিনি।
ওস্তাদ জানার উদ্দিন বলেন, এই লাঠি খেলা আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। আমার বাবা ও দাদা এক সময় লাঠি খেলতেন, সেই ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছি।
কোরবান আলী নামের আরেক ওস্তাদ জানান, লাঠিখেলা দেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খেলা। তবে আধুনিক খেলাধুলার ভীড়ে এই ঐতিহ্যবাহী খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে। সবার সম্মিলিত উদ্যোগে একে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।
জামাল নামের এক লাঠিয়াল জানান, এটা নিছক একটি খেলা নয়। এর থেকে আত্মরক্ষার কৌশলও শেখা যায়।
দর্শক শাহরিয়ার ইমন রুবেল জানান, লাঠিখেলা শুরুর আগে প্রতিটি দলই শারীরিক নানা কসরত দেখায়। নানা কৌশলে লাঠি ঘোরানো হয়। প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণ করা সবই ছিল ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে।
প্রসঙ্গত, লাঠিখেলা বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য। ওস্তাদ ভাই সিরাজুল হক চৌধুরী গোল্ডেন সোর্ড ১৯৩৩ সালে বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি করেন। ওস্তাদ ভাই সিরাজুল হক চৌধুরী প্রথমে নিখিল বাংলা লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেন। পরে এর নাম হয় বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী।’ যেটির সদর দপ্তর হিসেবে এই কুষ্টিয়া বিবেিচত হয়।