কুষ্টিয়ায় বেড়েই চলেছে চালের দাম। বোরো ধানের ভরা মৌসুমেও চালভেদে দাম বেড়েছে তিন থেকে চার টাকা। এ নিয়ে একমাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে ছয় দফায় কুষ্টিয়ায় চালের দাম কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।
দফায় দফায় চালের দাম বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে ক্রেতাদের। সবার এখন একটায় প্রশ্ন—চালের দাম শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে সব ধরনের চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব জায়গায় এর প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিন কুষ্টিয়া শহরের পৌর বাজার ও বড় বাজার ঘুরে চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের এক-দুদিন আগে থেকেই কুষ্টিয়ায় চালের দাম বৃদ্ধি শুরু হয়। ঈদের পর থেকে যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। সর্বশেষ গত শনিবার থেকে কুষ্টিয়ায় চালের দাম এক লাফে কেজিতে চার টাকা বেড়েছে।
গত শনিবার থেকে কুষ্টিয়ার চালের বাজারে অটো রাইচ মিলে ভাঙানো মিনিকেট চাল ৬৬-৬৭ টাকা কেজি ২৩ মে ছিল ৬৪ টাকা, সাধারণ মিনিকেট ৬৪ টাকা, অটো রাইচ মিলে ভাঙানো কাজললতা ৫৭ টাকা, কাজললতা সাধারণ ৫২ টাকা, অটো রাইচ মিলে ভাঙানো বাসমতি ৭৬ টাকা থেকে কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকায়, সাধারণ বাসমতি ৭৬ টাকা, অটো রাইচ মিলে ভাঙানো কাটারীভোগ ৭২ টাকা, নাজিরশাইল ৭৮ টাকা ও অটো রাইচ মিলে ভাঙানো পাইজাম ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কুষ্টিয়া পৌর বাজারের চাল ব্যবসায়ী আনিস জানান, দুদিন আগে মিল গেটে যে দামে তারা চাল কিনছেন, পরের দিন সে দামে আর চাল কিনতে পারছেন না। বেশি দামে চাল কিনে আনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মিল গেটে চালের দাম বেশি থাকলে আমরা কম দামে কীভাবে বিক্রি করবো?’ মে মাসজুড়ে বৃষ্টিপাত এবং ঘূর্ণিঝড় আশানির প্রভাবে ধানের বাজার চড়া বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর মিল গেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিল গেটেও চালের দাম দফায় দফায় বেড়ে যাচ্ছে। খাজানগরের গোল্ডেন অটো রাইচ মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিহাদুজ্জামান জিকু জানান, বৃষ্টিপাত এবং ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এ জেলার কৃষকদের প্রায় ৩০ ভাগ ধান মাঠেই নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে বর্তমানে ধানের বাজার চড়া। প্রতিনিয়ত ধানের দাম বাড়ছে। ফলে বাধ্য হয়েই তাদেরকেও চালের দাম বাড়াতে হচ্ছে।
তিনি জানান, মে মাসের শুরুতে মিনিকেট (সরু) ধানের বাজার ছিল ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ। এখন সেই ধান বাজারে ১৫০০ টাকা মণ কিনতে হচ্ছে। একইভাবে কাজললতা ১৩০০, আঠাশ ১৩০০ থেকে সাড়ে ১৪০০ এবং বাসমতি ১৫৫০ থেকে ১৬০০ টাকা মণ কিনতে হচ্ছে।
বর্তমানে খাজানগর মিল গেটে এক বস্তা (৫০ কেজি) মিনিকেট প্রকারভেদে ৩১০০ থেকে ৩২৫০ টাকা, কাজললতা ২৭০০ থেকে ২৮০০ টাকা এবং ২৫ কেজির বস্তা বাসমতি চাল ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে চালের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হিসেবে খাজানগরের এক শ্রেণির মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী এবং সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন সাধারণ ক্রেতারা।
চাল কিনতে আসা রিকশাচালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চালের দাম বেড়েই চলেছে। আমরা চাল কিনতে গিয়ে হাপিয়ে উঠছি। মানুষজনের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
বাংলাদেশ অটো মেজর হাসকিং রাইচ মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশী বলেন. বর্তমান সময়ে সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে মাঠের অনেক ধান নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে ধানের বাজার চড়া থাকছে। বেশি দামে ধান কেনার কারণে চালের দামও বেড়ে যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এবার জেলার ছয়টি উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ধানের উচ্চফলন হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ৩৫ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে।
উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪৭৮ মেট্রিক টন। এ বছর ফলন বেশ ভালো হওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ।