কুষ্টিয়া অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’র মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ। এ যন্ত্র দিয়ে রোপণ করা হচ্ছে ধানের চারা। এতে সাশ্রয় হচ্ছে সময় ও অর্থের, কমছে উৎপাদন খরচ আর অধিক লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। কৃষিবান্ধব এই যন্ত্রটি দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে বেশি জমিতে ধান রোপণ করা সম্ভব হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কুষ্টিয়ার চাষিরা ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’ যন্ত্রের মাধ্যমে ধান রোপণ করছেন। এতে অধিক লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে একজন শ্রমিক দিনে ৩ থেকে ৪ একর জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারেন।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এই যন্ত্র দিয়ে একসঙ্গে ৬ লাইনে ধানের চারা রোপণ করা যায়। ধানের চারা রোপণে যন্ত্রটি ব্যবহার করলে রোপণ খরচ ৫০ ভাগ কমানো সম্ভব। সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে কমপক্ষে চারজন শ্রমিককে কাজ করতে হয়।
এতে খরচ হয় কমপক্ষে ২হাজার থেকে ২হাজার ৫শ টাকা। আর রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে এক বিঘা জমিতে ধান রোপণ করতে খরচ হয় ৫শ থেকে ৭শ টাকা। এছাড়া রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা রোপণ করলে লাইন সোজা হয়। ফলে পরবর্তীতে আগাছা নিংড়ানো, সার ও কীটনাশক ছিটানো ও ধান কাটা সহজ হয়। এ পদ্ধতিতে কৃষকেরা অধিক লাভবান হচ্ছেন।
কৃষির আধুনিকায়নে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় গতকাল বুধবার দুপুরে মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নে রবি মৌসুমে বোরো হাইব্রিড ধানের সমলয়ে চাষাবাদ ব্লক প্রদর্শণী স্থাপনের নিমিত্তে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধানের চারা রোপণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।
এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে এ রোপণ কাজের উদ্বোধন করেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শ্যামল কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এ সময় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক(শস্য) কৃষিবিদ রঞ্জন কুমার প্রামানিক, মিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লিংকন বিশ্বাস,
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জোয়ার্দ্দার, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ, সদর উপজেলা কৃষি অফিসার বিষ্ণুপদ সাহা, ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সাইখুল ইসলাম, আমলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মালিথাসহ ১৫০ জন কৃষক কৃষাণী উপস্থিত ছিলেন।
রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে রবি মৌসুমে বোরো হাইব্রিড ধানের চারা রোপণ উদ্বোধনকালে জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন বলেন, সরকার কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। মেশিনের মাথ্যমে ধান রোপণের ফলে চাষিরা অধিক লাভবান হবেন। আর মেশিন ক্রয়ে সরকার চাষিদের আর্থিক সহায়তা করছে।
তিনি কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করছে। আর এসব যন্ত্র ক্রয়ে সরকার কৃষককে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছে। ফলে কৃষক অধিক লাভবান হচ্ছেন।
মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, আগামীর কৃষি মানেই যন্ত্রনির্ভর কৃষি। যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণের ব্যবস্থা করেছি। এর মূল কারণ হচ্ছে অল্প সময়ে অধিক জমিতে চারা রোপণ করা সম্বব হচ্ছে, উৎপাদন খরচও কমে যাবে, কৃষিক লাভবান হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে রোপা আমন ধান চাষ কুষ্টিয়ায় জনপ্রিয় হচ্ছে। চলতি মৌসুমে এই অঞ্চলে ১০০ হেক্টর জমিতে রাইস ট্রান্স প্লান্টার দিয়ে ধান রোপণ করতে সক্ষম হয়েছি। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ পদ্ধতি কৃষকের মাঝে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রাইস ট্রান্স প্লান্টার মেশিন, কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনে ক্রয়ে সরকার কৃষকদের সহযোগিতা করছে।