দক্ষিণবঙ্গের সাথে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের প্রায় চারশো মিটার গর্ত আর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও সড়কটির কিছু অংশ দেবে যাওয়ার কারণে কুষ্টিয়ার ত্রিমোহনী থেকে ভেড়ামারা বারোমাইল পর্যন্ত সড়কের প্রায় ৭ কি.মিটার এলাকা জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
রাস্তার দুপাড়ে কয়েক শত বাস-ট্রাককে রাস্তা পারাপারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। দেবে যাওয়া অংশের দুই প্রান্তের সামান্য এই ৪শ মিটার সড়ক পার হতে প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। দেবে যাওয়া এই সড়কে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই ছোট-খাট দুর্ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে, দেখা দিয়েছে চরম ভোগান্তি। সড়ক বিভাগ ইট বালু ফেলে জরুরি মেরামত কাজ করলেও এতে তেমন কোন সুফল মিলছে না।
গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি যেন এখন মহাদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কটির দেবে যাওয়া এই অংশটি দেখে বোঝার কোন উপায় নেই যে এটি এক সময় মহাসড়ক ছিল। দেখে মনে হবে এটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোন এক কাঁচা সড়ক। অথচ এই সড়কটিই হচ্ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে উত্তরাঞ্চলের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম।
জাতীয় সড়কের অংশ গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি প্রায় এক বছর ধরেই খানাখন্দে ভরে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। এর মধ্যেই আবার গত দিন দশেক আগে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রানাখড়িয়া জ্যোতি ফিলিং স্টেশনের কাছ থেকে কবরস্থান পর্যন্ত প্রায় ৪ শ মিটার সড়ক দেবে গেছে। পিচ উঠে গিয়ে কাদামাটি বের হয়ে বোঝার কোন উপায় নেই এটি কোন এক সময় মহাসড়ক ছিল। সড়কটি দেবে যাওয়ায় কুষ্টিয়ার ত্রিমোহনী থেকে ভেড়ামারা বারো মাইল পর্যন্ত প্রায় ৭ কি. মিটার সড়কের দুই ধারে প্রায় শত শত বাস-ট্রাকসহ যানবাহনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
তালবাড়ীয়া এলাকার বাসিন্দা শান্ত বিশ্বাস জানান, এই সড়কের বেহাল দশা অনেক দিন ধরেই। গতবছরে এই সড়কে উচুনিচু আবার কখনো ঢিবির মতো ছিলো। যার কারনে প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটতো। আবার এ বছরে গর্তের কারণে একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তালবাড়ীয়া থেকে মোটরসাইকেল যোগে শহরে যাওয়া শামীম রেজা নামের এক ব্যক্তি বলেন, শহরের পুলিশ শপিং কমপ্লেক্স এ চাকরি করি। প্রতিদিন সকালে গিয়ে আবার রাতে আসা লাগে। এই সড়কের বেহাল দশার কারনে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রাস্তায় গর্তের কারণে অনেক সময় দীর্ঘ জানযটের সৃষ্টি হয়। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই আমরা।
ঢাকা থেকে আসা এসবি সুপার ডিলাক্স এর চালক রিপন নবী জানান, বারোমাইল থেকে কুষ্টিয়া শহর পর্যন্ত সড়কে তিন ঘন্টা সময় লেগেছে। এ সড়কের কারনে আমরা গাড়ীর টিপ মিস করছি। স্থানীয় সড়ক বিভাগের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দুই বছর দুই মাস আগে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি নির্মাণ করা হয়। সে সময় পণ্য বোঝাই ভারি ভারি যানবাহন চলাচলের মত সক্ষমতার বিষয়টি মাথায় না রেখেই সড়কটি নির্মাণ করায় কয়েক দিন পর থেকেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে উচুঁ-নিচু হতে দেখা যায়। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়ে সড়কটি একেবারেই যান চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা জানান, যে স্থানে সড়ক দেবে গেছে তার পাশেই রানাখড়িয়া বালুর ঘাট রয়েছে। প্রতিদিন বালু বোঝাই ভেজা শত শত ভারি ট্রাক এখান দিয়ে মহাসড়কে উঠছে। সে সময় ভারি যানবাহন এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করবে এমন সক্ষমতার কথা বিবেচনা না করেই মহাসড়কটি নির্মাণ করায় এখন জনসাধারণকে এর খেসারত দিতে হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ জনদুর্ভোগ লাঘবে এই মহাসড়কে ইট বালু ফেলে জরুরি মেরামত কাজ করলেও এর কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
কুষ্টিয়া-সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলাম জানান, কুষ্টিয়ার ত্রিমোহনী থেকে ভেড়ামারা উপজেলার বারো মাইল পর্যন্ত প্রায় ১২ কি. মিটার সড়কটি পুন:নির্মাণের জন্য সম্প্রতি দরপত্র আহবান করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে। সড়কটি পুন:নির্মাণ সম্পন্ন হলে জনদুর্ভোগ নিরসন সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।