কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে নৌকার প্রার্থী জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন। কামারুল আরেফিন ট্রাক প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৯ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। আর হাসানুল হক ইনু নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪৪৫ ভোট। প্রায় ২৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন কামারুল আরেফিন।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত জাসদ থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হলেও ২০০৮ সালে এসে মহাজোট থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। এরপর ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও ২০১৮ সালে বিএনপি-জামায়াতকে কোণঠাসা করে জয়ী হন বড় ব্যবধানে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইনু ২ লাখ ৮০ হাজার ৬৩৬ ভোট। তবে এবার এসে তার ভোটের সংখ্যা মাত্র ৯২ হাজার। এর আগে ৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ভোটের হিসেব করলে দেখা যায় ৩০ হাজারের সামান্য বেশি ভোট পেয়েছিলেন তিনি।
এদিকে গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নানা কারনে দ্বন্দ্ব প্রকট হয় ইনুসহ জাসদের। যার ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরোধিতার মুখে পড়েন। ইনুকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন।
কামারুল আরেফিন ৮০’র দশকে ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে। এরপর যুবলীগের রাজনীতি শুরু করেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। পরে হামলা-মামলায় টিকতে না পেরে পালিয়ে যান এলাকা ছেড়ে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এলাকায় ফিরে আসেন। এরপর ২০১১ সালে সদরপুর ইউনিয়ন থেকে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিপুল ভোটে। পরে কাউন্সিলে মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের পর ইউপি চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়ী হন। এরপর ২০১৮ সালে এসেও একই পদে জয়ী হন তিনি।
আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মিরপুর ও ভেড়ামারায় তার জনপ্রিয়তা আছে কর্মিদের মাঝে। দেশ সেরা উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন কামারুল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইনুর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। নানা প্রতিকুলতার পরও তাকে মাঠ থেকে সরাতে পারেনি ইনু। বিরোধিতার পরও ভোটের মাঠে ম্যাজিক দেখিয়ে ইনুকে ঘায়েল করেছেন জয়ী হয়েছেন।
জয়ী হওয়ার পর দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে আসেন।
জয়ী হয়ে কামারুল আরেফিন বলেন, ‘আমি জনতার নেতা। সব ছেড়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলাম। জনগন ভোট দিয়ে আমার স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিয়েছে। আমি শুকরিয়া জানাই আল্লাহর দরবারে। মিরপুর-ভেড়ামারাবাসীর এ দেনা আমি কখনো শোধ করতে পারব না। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাব।’
এদিকে ইনুর পরাজয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
এদিকে ৩৩ বছর পর এমপি পেল মিরপুরবাসী। সর্বশেষ ১৯৯১ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন আব্দুর রউফ চৌধুরী। এরপর ভেড়ামারা থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছে বারবার। তার আগে ১৯৮৬ সালে জামায়াতের আব্দুল ওয়াহেদ এমপি হন প্রথমবারের মতো।