কোটচাঁদপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ম বহির্ভূত অতিরিক্ত টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে দলিল লেখক ও সাব-রেজিস্ট্রারের মধ্যে দরকষাকষির একপর্যায়ে ক্ষোভে দলিল লেখা বন্ধ করে দেন দলিল লেখকরা। এতে জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা ভুক্তভোগীরা চরম বিপাকে পড়েন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) হস্তক্ষেপে ছয় ঘণ্টা পর কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কোটচাঁদপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সপ্তাহে দুই দিন জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। সেখানে দায়িত্বে আছেন সাব-রেজিস্ট্রার তামিম আহম্মেদ চৌধুরী। বুধবার সকালে তিনি দলিল লেখকদের অফিসে ডাকেন এবং জমি রেজিস্ট্রির অতিরিক্ত টাকা চাওয়া নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় দলিল লেখকদের ওপর অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের চাপ প্রয়োগ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
দলিল লেখক সমিতির সভাপতি বদর উদ্দিন জানান, “সকালে সাব-রেজিস্ট্রার আমাদের ডেকে বলেন, ওয়ারিশের জমির দলিলে অতিরিক্ত টাকা বাড়িয়ে দিতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন অজুহাতে জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিতে বলেন। আগে ওয়ারিশ সংক্রান্ত ফি ৫ হাজার টাকা নেওয়া হতো, কিন্তু এখন আরও বেশি নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে, যা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।”
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দলিল লেখকরা অফিস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন এবং দলিল লেখা বন্ধ করে দেন। এতে জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা ভুক্তভোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
হরিণদিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম ও রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আমরা জমি রেজিস্ট্রি করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু অফিস থেকে ওয়ারিশ সংক্রান্ত ফি বাবদ ১০ হাজার এবং প্রত্যয়ন ফি বাবদ আরও ১০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। তবে সাব-রেজিস্ট্রার সরাসরি টাকা নেন না, অফিসের বড় বাবু আবদুল মালেক ও টোটন নামের এক ব্যক্তি টাকা নেন।”
সাব-রেজিস্ট্রার তামিম আহম্মেদ চৌধুরী তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সকালে দলিল লেখকদের ডেকে জমি রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম। আমি একটি বিষয় বলার পর তারা রাজি হননি। পরে আমি তাদের চলে যেতে বললে তারা বাইরে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দলিল লেখা বন্ধ করে দেন। এতে জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।”
কোটচাঁদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অপু কুমার বিশ্বাস জানান, “ওসি স্যার আমাকে জানান, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সমস্যা হচ্ছে। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক পাই। এখনো পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনিসুল ইসলাম বলেন, “এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সাব-রেজিস্ট্রার। এ বিষয়ে তার সঙ্গেই কথা বলুন। আমার কোনো মন্তব্য নেই।”
পরবর্তীতে ইউএনওর মধ্যস্থতায় দলিল লেখকরা আবার দলিল লেখা শুরু করেন, ফলে ছয় ঘণ্টা পর জমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়।