আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন তামিম ইকবাল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে হতাশাজনক হারের পর আচমকা ব্যক্তিগত সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। সেই সংবাদ সম্মেলনেই অশ্রুসিক্ত নয়নে ১৬ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ের ইতি টানেন তামিম। তামিমের এমন সিদ্ধান্তে হতবাক হয়েছেন অনেকেই। তবে সিরিজের মাঝপথে হুট করে কেনো এমন সিদ্ধান্ত নিলেন তামিম। কোনো চাপে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন কিনা তামিমকে এমন প্রশ্ন করেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) দুপুর দেড়টায় চট্টগ্রামের হোটেল টাওয়ার ইনে সংবাদ সম্মেলনে তামিম তার অবসরের ঘোষণা দেন। নিজের ঘরের মাঠেই ক্যারিয়ারের ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন বলে জানান চট্টলার বিখ্যাত খান পরিবারের সন্তান। তামিম বলেন, ‘আজ এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি।’
তামিমের অবসরের ঘোষণার পর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে মাশরাফি লিখেছেন, ‘তামিম, তোর সিদ্ধান্ত অবশ্যই একান্তই তোর। এটা কারও ভালো লাগলেও তোর, ভালো না লাগলেও তোর। পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথাই হবে। তবে সবচেয়ে ভালো কোনটা, সেটা তুই ছাড়া কেউই ভালো বুঝবে না। তাই তোর এই সিদ্ধান্তকে আমি ব্যক্তিগতভাবে শতভাগ সম্মান জানাই। তবে কিছু কথা জানতে মন চায়, মাত্র ৩৪ বছর ১০৮ দিনেই বিদায় কেন! আসলেই কি চালিয়ে যেতে পারছিস না? না কি কোনো চাপ তোকে বাধ্য করেছে! তোর অনেক ভক্ত হয়তো খুঁজে ফিরবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর। আজ খুঁজবে, এমনকি ভবিষ্যতও আরও অনেকদিন খুঁজবে।’
তামিমকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি আরও লিখেন, ‘তোকে প্রথম দেখেছি চট্টগ্রামে তোদের বাসায়, হাফ প্যান্ট পরে খেলছিলি। তোর ভাই, আমার বন্ধু নাফিস ইকবাল তোকে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। পরের বার দেখলাম জাতীয় লীগে ওপেন করতে, খুলনার মাঠে। তারপর ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে একসঙ্গে পথ চলতে চলতে তুই হয়ে গেলি বন্ধুর মতো। কত দিন কত রাত এক সঙ্গে সময় কাটিয়েছি, একসঙ্গে খেতে যাওয়া, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা, দুষ্টুমি, মজা, তর্ক, খেলা নিয়ে কত কত আলোচনা করেছি, সেসবের কোনও হদিস নেই।’
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক আরও লিখেন, ‘যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলাম, তখন তুই ছিল আমার অন্যতম ‘স্নাইপার।’ সেটা তুই নিজেও খুব ভালো করেই জানিস। যেদিন দল থেকে বের হয়ে এলাম, সেদিন তুই আমাকে কাঁধে তুলে নিয়েছিলি। পরে সারারাত একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছিলাম। যে কোনও সিরিজ বা সফরে তুই ছিলি আমার রুমে আড্ডার অবধারিত সঙ্গী। আরও কত শত স্মৃতি এখন মনে পড়ছে!’
তামিমের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে মাশরাফি লিখেন, ‘তোকে যতটুকু চিনি, তাতে তোর এই সিদ্ধান্তকে আমি অনায়াসে পোস্টমর্টেম করতে পারতাম। কিন্তু তা করব না, কারণ ওই যে, তোর নিজস্ব সিদ্ধান্তকে অবশ্যই সম্মান জানানো উচিত। তোর মানসিক অবস্থা আমি বুঝতে পারছি, সেই সঙ্গে এটাও বলছি যে, তুই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যা কিছু দিয়েছিস, তা আমরা আজীবন মনে রাখব। একজন তামিম হয়ে উঠতে কতটা পরিশ্রম, কতটা সময়, কতটা মেধা আর কত ত্যাগ থাকতে হয়, তা সময় সব কিছু বুঝিয়ে দেবে।’
সবশেষে তামিমকে শুভকামনা জানিয়ে মাশরাফি আরও লিখেন, ‘তোর প্রতি রইল অফুরন্ত ভালোবাসা। পরবর্তী জীবন পরিবার নিয়ে দারুণ কাটাবি, সেই আশাই করছি। আর একটা কথা, দলের ভেতর নানা পরিসংখ্যান নিয়ে বিশ্লেষণ নির্ভর আলোচনা এখন কে করবে, ঠিক জানি না। হয়তো কেউ করবে। তবে তুই এই জায়গায় সবসময়ই থাকবি সেরাদের সেরা। গুড বাই মি. তামিম ইকবাল খান। একজন কিংবদন্তির বিদায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য শুভ কামনা, এগিয়ে চলুক দুর্বার গতিতে। আমাদের এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়।’
সূত্র: ইত্তেফাক