গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের সিমা খাতুন নামের এক উপকার ভোগীর সরকারী খাদ্যবন্ধব কর্মসুচি(ওএমএস) এর কার্ড ছিড়ে দেয়ার ঘটনায় করা অভিযোগ অবশেষে ক্ষমা চেয়ে নিষ্পত্তি হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে করা লিখিত আবেদন শুনানি হয়। ভুক্তভোগীর করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওমএমএস ডিলার ইলিয়াসকে ডেকে মধ্যস্থতা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া সিদ্দিকা সেতু। এসময় ক্ষমা চাওয়ার ও এমন কর্মকান্ড ভবিশ্যতে যেন না ঘটে তার জন্য শতর্ক করে দেয়া হয় ডিলার ইলিয়াসকে। সেই সাথে সিমা খাতুনকে নতুন কার্ড করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।
জানা গেছে,ওএমএস এর কাথুলী ইউনিয়নের ডিলার ইলিয়াসের বিরুদ্ধে কার্ড ছিড়ে ফেলা ও গালিগালাজ করায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন গাংনীর কাথুলী ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়া গ্রামের সিমা খাতুন নামের এক ভুক্তভোগী ।
ওএমএস ডিলারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী করে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ভুক্তভোগী সিমা খাতুন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া সিদ্দিকা সেতুর বরাবর লিখিত আবেদন জমা দেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে উপজেলা খাদ্য অফিসারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেন ইউএনও। বিষয়টি ঘটনা স্থলে না গিয়ে অভিযোগকারী সিমা খাতুনকে অফিসে ডেকে নিয়ে অফিসে বসেই তদন্ত শেষ করেন খাদ্য অফিসার। তদন্ত কর্মকর্তার দেয়া তথ্য অভিযোগকারী ও ডিলার ইলিয়াসকে ডেকে নেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে।
বিষয়টি ছিল ডিলার ও অভিযোগকারি সিমা খাতুনের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও ভুলবোঝাবুঝি। এমন কথা জানিয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া সিদ্দিকা সতু দৈনিক মেহেরপুর প্রতিদিনকে জানান, সিমা খাতুনের অভিযোগ গুরুত্বের সাথে দেখা হয়েছে। কার্ড ছিড়ে দেয়ার বিষয়টি বিভিন্ন মানুষকে জানতে চাওয়া হলে এবিষয়ে কেউ দেখেনি বলে জানান। তাছাড়া কার্ড ছিড়ে দিলেও ওমএমএস এর চাল নিতে কোন সমস্যা হবেনা। তাই ডিলার ইলিয়াসকে আবেদনকারি ক্ষৃমা করে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ডিলার ইলিয়াসও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।এরপর ডিলার এমন কর্মকান্ডের বিষয়ে অভিযোগ পেলে ছাড় দেয়া হবেনা বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য: বর্তমান সরাকরের বহুল প্রশংসিত খাদ্যবান্ধব কর্মসুচী(ওএমএস) কার্ডে চাউল নিতে গেলে ডিলার ইলিয়াসের বিরুদ্ধে
কার্ড ছিড়ে টুকরো টুকরো করে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। বুধবার বেলা ১১ টার সময় খাদ্যবান্ধব কর্মসুচীর কার্ডে চাউল উত্তোলনের সময় কার্ড ছিড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে। পরে ছেড়া কার্ডের টুকরোগুলোও সযতেœ গুছিয়ে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বাড়ি ফেরেন অসহায় নারী সিমা খাতুন। সিমা খাতুন গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়া গ্রামের মৃত মাহাবুলের স্ত্রী।
সিমা খাতুনের অভিযোগ, আমার স্বামী একমাত্র উপার্জনের ভরসা ছিল। ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকমে সংসার চলতো। এর মধ্যে অসুস্থতার কারনে আমার স্বামী মারা যায়। বিষয়টি জেনে কাথুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমাকে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির একটি কার্ড করে দেন। সেই কার্ডের চাউল নিয়ে কোন রকমে আমার ছেলে মেয়েদের খাবার জোগায়। খাদ্যবান্ধব কর্মসুচীর কাথুলী ইউনিয়নের ডিলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের আব্দুস সবুর ইলিয়াসের চাউল মাপার কাজ করেন সিমা খাতুনের ছেলে মারুফ হোসেন। বুধবার চাউল ওজনের সময় মারুফ প্রচন্ড গরমে হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে সে বাড়ি চলে যায়। এসময় ইলিয়াস তাকে ডাকতে গেলে অসুস্থ্য এই মুহুর্তে চাউল ওজনের কাজ করতে পারবেনা বলে জানায় মারুফ। সে সময় মারুফের মা সিমা খুতন তার কার্ডে চাউল নেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মারুফ চাউল ওজনের কাজ করবে না এমন ক্ষোভে সিমা খাতুনের হাত থেকে কার্ড কেড়ে নিয়ে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দেয় ডিলার ইলিয়াস হোসেন। ছেড়া কার্ডের টুকরো গুলো কুড়িয়ে আচলে ঁেবধে চোখ মুছতে মুছতে বাড়ি যান সিমা খাতুন।
এঘটনায় ওই দিন ভুক্তভোগী সিমা খাতুন বিষয়টি গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর মৌখিক অভিযোগ করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি কাথুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানাকে সুরাহা করার নির্দেশনা দেন। বিষয়টি সেখানে নিষ্পত্তি না হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত আবেদন করেন সিমা খাতুন নামের ওই ভুক্তভোগী।