স্বামীর সাকিব আলম মিশুর নির্যাতনে নিহত হাসনা হেনা ঝিলিকের পরিবার ছিল আর্থিক দিক থেকে অসচ্ছল। এজন্য সাকিবের পরিবার ঝিলিকের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইত না। সাকিবের পরিবার বিভিন্ন সময় ঝিলিককে নির্যাতন করত।
ঝিলিকের মা আসমা বেগম পুলিশকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, হাসনা হেনা ঝিলিককের (২৩) মৃত্যু হয়েছে রাজধানীর গুলশানের বাসায়। শনিবার সকালে মৃত স্ত্রীকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নেওয়ার সময় হাতিরঝিলে দুর্ঘটনার নাটক সাজান সাকিব।
তারপর পুলিশের সহায়তায় ঝিলিককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তবে স্বামীর আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ তাকে আটক করে।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানান, ওই নারীর পা, মাথা ও গলায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে হয়তো শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, গুলশান-২ এর ৩৬ নম্বর রোডের ২২/সি নম্বর বাসা থেকে সকালে চারজন ওই নারীর নিথর দেহ গাড়িতে তোলেন।
হাতিরঝিল থানা পুলিশ জানায়, শনিবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে তারা খবর পান হাতিরঝিল আমবাগান মূল সড়কে সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, একটি প্রাইভেটকার সড়ক বিভাজকের ওপর উঠে আছে। এক নারীকে পেছনের সিটে শায়িত অবস্থায় পাওয়া যায়। আর ওই নারীর স্বামী সামান্য আহত হন। তাদের দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক ওই নারীকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রথমে সাকিব পুলিশকে জানান, তার স্ত্রী ঝিলিক অসুস্থ ছিলেন। নিজেই গাড়ি চালিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। হাতিরঝিলে চাকা পাংচার হয়ে সড়ক বিভাজকের ওপর গাড়ি উঠে পড়ে।
তবে হাসপাতাল সূত্র জানায়, ওই নারী দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মারা যাওয়ার কোনো আলামত নেই শরীরে। তার পা, মাথা ও গলায় আঘাতের কালচে দাগ রয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাকে হয়তো বালিশ চাপা (শ্বাসরোধে) দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ময়নাতন্তকারী চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, বালিশ চাপা দিয়ে কাউকে হত্যা করা হলে যে ধরনের লক্ষণ দেখা যায়, ওই নারীর শরীরে একই ধরনের লক্ষণ রয়েছে।
নিহতের পরিবার জানিয়েছে, দুই বছর আগে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে তাদের বিয়ে হয়। তাদের আট মাস বয়সি ছেলে সন্তানও আছে। আর্থিক দিক থেকে দুটি পরিবারের মধ্যে সামঞ্জস্যতা ছিল না। আর্থিক দিক থেকে সচ্ছল হওয়ায় সাকিবের পরিবার ঝিলিকের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইত না। সাকিবের পরিবার বিভিন্ন সময় ঝিলিককে নির্যাতন করত।
ঝিলিকের মা আসমা বেগম জানান, তার স্বামী (ঝিলিকের বাবা) আনোয়ার হোসেন এক বছর আগে মারা গেছেন। তাদের তিন মেয়ে এবং এক ছেলে। তিনি অন্য সন্তানদের নিয়ে মোহাম্মদপুরে থাকেন।
এ ঘটনায় ঝিলিকের মা গুলশান থানায় মামলা করেছেন। গতকাল রোববার স্বামী সাকিব আলম মিশুর তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একইসঙ্গে ঝিলিকের শ্বশুর-শাশুড়িসহ চারজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কারাগারে যাওয়া চার আসামি হলেন- ঝিলিকের শ্বশুর জাহাঙ্গীর আলম, শাশুড়ি সাঈদা আলম, দেবর ফাহিম আলম ও টুকটুকি।