অনাহারে অর্ধাহারে অন্ধকার কুড়ে ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছে সেকান্দার আলীর ও তার স্ত্রী তারাফোন খাতুন। তাদের বাড়ি মেহেরপুরের গাংনীর বামন্দী ইউনিয়নের ঝোড়াঘাট গ্রামে। বৃদ্ধ দম্পতির শেষ বয়সে শীতে কুঁড়ে ঘরে স্যাঁতসেতে মেঝেতে বিছানো একটি পাটিই এখন তাদের ভরসা।
রোগাক্রান্ত শরীর আর অভাব অনটন নিয়ে কোন দিন তার চুলা জ্বলে, আবার কখনও না খেয়েই দিন পার করছে তারা। নিকটত্মীয় বলতে একমাত্র ছেলে তারও অভাবের কারণে সব সময় বৃদ্ধ পিতা মাতাকে দেখভাল করা সম্ভভ হয়ে উঠে না।
বয়সের ভারে বৃদ্ধ সেকান্দার আলীর ও তার স্ত্রী তারাফোন খাতুনের পক্ষে চলাচল করাটাও কষ্টসাধ্য। তবুও পেটের দায়ে রোগা শরীর নিয়ে লাঠিভর দিয়ে মানুষের কাছে হাত পেতে যদি কিছু জোটে তা দিয়েই জ্বলে তাদের চুলা। অসুস্থতার কারণে বাড়ির বাইরে খাবারের সন্ধানে বের হতে না পারায় উপোস থাকতে হয় তাদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেকান্দার আলীর ও তার স্ত্রী তারাফোন খাতুন ছোট একটি কুঁড়ে ঘরে বসবাস করে। ঘরে বৈদ্যুতিক কোন সুবিধা নেই। নেই কোন আলোর ব্যবস্থাও। খুব প্রয়োজন হলেও খড়কুটোর আগুন দিয়ে কিছু সময়ের জন্য আলোর ব্যবস্থা করে তারা। ঘরের বিভিন্ন অংশ ভাঙ্গাচোরা হওয়ার কারণে পোকা মাকড়ের সাথেই বসবাস করতে হয়। সেখানে এলোমেলো তার পুরনো কাপড়-চোপড়। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাড়ি-পাতিল। এসব নিয়েই তাদের সংসার। ছোট্ট ঘরে আলো নেই। ছোট একটি কুঁড়ে ঘরে আতঙ্ক আর ভয়ভীতির মধ্যে রাত্রি পার করতে হয় তাদের।
কান্না ভেজা চোখে সেকান্দার আলীর বলেন, অভাব অনটনে খুব কষ্টে আছি। এখন আমাদের দুচোঁখে আর কোন স্বপ্ন নেই। দারিদ্রের কারণে সব স্বপ্ন যেন ম্লান হয়ে গেছে। অভাব অনটনের সংসারে মেটাতে পারেনি জীবনের অনেক শখ। কিছুদিন আগেও পরের জমি বা কারো বাড়িতে কামলা খেটে চালাতে সংসার। এখন বয়সের ভারে আর কাজ করতেও পারি না।
ঝড় বৃষ্টি মাথায় বছরের পর বছর এই ভাঙ্গা কুড়ে ঘরেই বসবাস করছি। কথাগুলো বলার সময় দুচোখে কষ্টের মেঘ আর জমে থাকা চোখের জল ছলছল করছিল সেকেন্দার আলীর। এই শীতে রাতে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। অসুস্থ হলেও টাকার অভাবে ঔষধ কিনতে পারি না। বৃদ্ধ বয়সে কাজ কর্ম করতে পারিনা একারণে অভাব অনটন লেগেই আছে। প্রধানমন্ত্রী যদি একটি ঘর দিতো তাহলে অন্তত কিছু কাল ঐ ঘরে শান্তিতে ঘুমিয়ে জীবন পর করতে পারতাম।
সেকান্দার আলীর স্ত্রী তারাফোন খাতুন জানান, সরকারী তেমন কোন সুবিধা পান না তারা। পরের বাড়িতে চেয়ে চিন্তে কোন রকম দুমুঠো খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন। কুঁড়ে ঘরটাও নড়বড়ে। পোকা মাকড়ের সাথেই বসবাস করতে হয়। সেই কবে যে মাছ মাংশ দিয়ে পেট পুরে ভাত খেয়েছি মনেই নেই। আর মাছ মাংসের আশা করিনা। শুধু মাত্র দিনে ৩ বার না হোক অন্তত ২ বার ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা পেলেই আমরা খুশি।
প্রতিবেশিরা জানান, প্রায় প্রতিটা ইউনিয়নেই অনেক সচ্ছল পরিবার সরকারী ঘর বরাদ্দ পেলেও এই হতদরিদ্র পরিবারটি কেন যে ঘর পাইনি তা আমাদের জানা নেই। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরের প্রাপ্য অধিকার এই পরিবারটির আছে। পরিবারটির অভাব-অনটনের শেষ নেই। গ্রামের মানুষের দেয়া চাল ডালে তাদের সংসার চলে।
বামন্দী ইউপি সদস্য দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা মো: আলফাজ হোসেন জানান, সেকান্দার আলী ও তার স্ত্রী তারাফোন খাতুন খুবই দরিদ্র মানুষ। অন্য’র সহযোগিতা নিয়ে কোন রকম বেঁচে আছে। কিছুদিন আগে সেকান্দার আলীকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। কিন্তু বয়স্ক ভাতার টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলেনা। সরকারী ভাবে উপজেলা থেকে তাদের জন্য কিছু বরাদ্দ দেয়া হলে কিছুটা হলেও তাদের দু:খ কষ্ট লাঘব হবে।
বামন্দী ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, করোনা দূর্যোগের সময় ত্রাণ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তাদের সহযোগিতা করার মত সরকারী বরাদ্দ নেই। তবে সেকান্দার আলী ও তার স্ত্রী তারাফোন খাতুন যোগাযোগ করলে ব্যক্তিগত ভাবে কিছু সহযোগিতা করা হবে।
গাংনী উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমান বলেন, সেকান্দার আলীর স্ত্রী তারাফোন খাতুন অফিসে যোগাযোগ করলে বয়স্ক ভাতার কার্ড দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, আগামীতে সরকারী ভাবে ঘর বরাদ্দ আসলে সেকান্দার আলী ও স্ত্রী তারাফোন খাতুনের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।