মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কর্মরত অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর রেজাউল হকের বিরুদ্ধে ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
গাংনী উপজেলার বালিয়াঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক পেনশনরত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। পারিবারিক পেনশন চালু করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে অফিসে আসলে সুযোগ বুঝে মোটা অংকের টাকা ঘুষ চেয়ে বসেন অফিস সহকারি রেজাউল হক।
এবিষয়ে রেজাউল হকের বিরুদ্ধে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী নাসরুল্লাহ আল জাদীদ নামের এক ব্যাক্তি। তবে ঘুষ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারি মো: রেজাউল বলেন, আমি ষড়যত্ন্রের মধ্যে পড়েছি।
তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিতম সাহা।
জানাগেছে, ২০১১ ইং সালে গাংনী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার পদে যোগদান করেন মো: রেজাউল হক। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে একই প্রতিষ্ঠানে তিনি কর্মরত থাকা অবস্থায় অফিসে কাজ নিয়ে আসলে শিক্ষকদের নানা ভাবে হয়রানী করে আসছেন রেজাউল হক। রেজাউল হকের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে মাঝেমধ্যে শিক্ষকদের মুখে শোনাযায় নানা গুঞ্জন। তবুও তিনি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বহাল তবিয়তে চাকুরি করে চলেছেন একই প্রতিষ্ঠানে । এনিয়ে নানা প্রশ্ন জনমনে।
লিখিত অভিযোগে জানাগেছে, গত-১৪/২/২০২৪ তারিখে পেনশনরত অবস্থায় মৃত্য বরণ করেন উপজেলার বালিয়াঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবু তাহের। তার মৃত্যুর পর চলমান পেনশন তার স্ত্রীর নামে চালু করার জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। উক্ত কাগজপত্র জমা নেয়ার সময় ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন অফিস সহকারি রেজাউল হক। কাগজ জমা দেয়ার মুহুর্তে ২ হাজার টাকা অগ্রীম জমা নেন রেজাউল হক। বাঁকী টাকা পরিশোধ করার পর কাগজপত্র সম্পন্ন করা হবে বলে জানান রেজাউল হক। বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষকদের মধ্যে জমা বাধে ক্ষোভ।
গতকাল সোমবার (৪ মার্চ) দুপুরে প্রয়াত শিক্ষক আবু তাহেরের ছেলে নাসরুল্লাহ আর জাদীদ অফিস সহকারি রেজাউল হকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে অফিস সহকারি রেজাউল হকের ঘুষ বানিজ্য ও অন্যান্য দুর্নীতি ক্ষাতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানানো হয়।
ভুক্তভোগী নাসরুল্লাহ আল জাদীদ জানান, আমার বাবার পেনশনের টাকায় আমাদের সংসার চলে। বাবার মৃত্যুর পর আমরা খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছি। এমুর্তে বাবার পেনশনের টাকা ছাড়া সংসারে অন্ধকার নেমে এসেছে। আমি কয়েকদিন আগে বাবার পেনশনটি আমার মায়ের নামে পরিবর্তন করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যায়। অফিসের সহকারি মো: রেজাউল হক আমাদের পরিবারের অসায়ত্নকে পুঁজি করে ১০ হাজার টাকা দাবী করেন। আমার কাছে মাত্র ২ হাজার টাকা ছিল আমি কাজ শুরু করতে বল্লে সেই ২ হাজার টাকা নিয়ে নেন। বাঁকী টাকা পরিশোধ করা হলে কাজে হাত দেবেন বলে জানান অফিস সহাকির মো: রেজাউর হক। বিষয়টি আমি আমার বাবার অন্যন্য সহকর্মিদের জানালে তাদের মধ্যে ক্ষোভ শুরু হয়।
এবিষয়ে সকলেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরারবর লিখিত অভিযোগ করতে পরামর্শ দেন। আমি সে মোতাবেক গতকাল সোমবার লিখিত অভিযোগ করেছি। তিনি আরও জানান, শুধু আমি নয়, আমার মত অনেক মানুষই রেজাউল হকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন কাজ নিয়ে দিনের পর দিন হয়রানী হলেও অনেকেই মুখ খলতে চাইনা। আমি ওই কর্মচারীর বিচার চাই। তাছাড়া তিনি একই প্রতিষ্ঠানে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চাকরি করছেন কিভাবে এমন প্রশ্ন করেন সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে।
তবে অফিস সহকারি রেজাউল হক ঘুষ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি কোন টাকার দাবী করিনি। আমার বিরুদ্ধে শিক্ষকরা ষড়যন্ত্র করছেন। এসময় অফিসে শিক্ষকদের আনাগোনা দেখে অফিস ছুটির আগেই দ্রত অফিস থেকে সটকে পড়েন রেজাউল হক।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি পারভেজ সাজ্জাদ রাজা বলেন, ঘুষ নেয়ার বিষয়টি আমাকে জানানো হলে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরারবর আবেদন করতে বলেছি। তবে একজন শিক্ষকের মৃত্যুর পর তার পরিবারকে জিম্মি করে ঘুষ দাবী করা খুবই দুঃখ জনক। আমিও এর সুষ্ঠ বিচার দাবী করছি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ নাসির উদ্দীন বলেন, আমার অফিসের অফিস সহকারি রেজাউল হকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি আবেদন করেছেন আবু তাহেরের ছেলে নাসরুল্লাহ আল জাদীদ। উক্ত আবেদনটি আমার বরাবর প্রেরণ করেছেন। আমি একটি তদন্ত কমিটি করে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখবো। এর সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারের সাথে অলাপ করে পরবর্তী করনীয় সম্পর্কে জানাতে পারবো॥
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা বলেন, আমার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। অভিযোগ প্রমানিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব॥