জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাকিল আহমাদ বলেছেন, তারুণ্যের মধ্যে রয়েছে দেশ প্রেম, কর্মস্পৃহা, কাজের প্রতি প্রতিজ্ঞা। তাই বয়স্কদের পরামর্শে আজকের তারুণরা আগামীতে দেশ গঠণে কাজ করবে। তরুণদের কাজের মধ্য দিয়ে দূর্ণীতিমুক্ত, বৈষম্যহিন একটি সুন্দর, সম্প্রীতির এক সম্ভাবনার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
গতকাল সোমবার বিকালে ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বায়নের লক্ষ, জাতীয় নাগরিক কমিটি মেহেরপুরের “গাংনী রাইজিং”র উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় একথা বলেন তিনি। গতকাল সোমবার বিকালে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাকক্ষে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আমির হামজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গাংনী পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক, নাহিদ মাহমুদ, প্রকৌশলী সাজেদুর রহমানসহ স্থানীয় সংবাদিক, অ্যাডভোকেটসহ নানা পেশার প্রতিনিধি।
জাতীয় নাগরিক কমিটি (জানাক)’র উদ্যেশ্য ও লক্ষ তুলে ধরে অ্যাডভোকেট শাকিল আহমেদ আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের কার্যক্রমকে সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে এবং জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে সমুন্নত রাখতে জাতীয় নাগরিক কমিটির সাংগঠনিক কাঠামো গঠন করা হয়েছে। আমাদের অসংখ্য ছাত্র ছাত্রী ভাই বোন বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে আমাদের কথা বলার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য।
জুলাই বিপ্লবে অসংখ্য শহীদ ভাইদের বিচার নিশ্চিত, তাদের পরিবারকে পূনর্বাসন, আহতদের চিকিৎসাসেবা ও তাদের সহযোগীতা নিশ্চিত করতেই জাতীয় নাগরিক কমিটির পথ চলা শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বৈষম্যহীন এই নতুন বাংলাদেশের শ্রমিক, দিনমজুরসহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষ যেনো তাদের নিজের কথা নিজে বলতে পারেন, নিজের স্বার্থ নিজে নিশ্চিত করতে পারেন। আমরা বাংলাদেশে তরুণ জনগোষ্ঠীর কথা বলতে চাই। আমরা পঞ্চাশ অনুর্ধ্ব রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নির্মাণ করবো। যাতে এই জুলাই বিপ্লব বার বার ফিরে না আসুক। এদেশ থেকে এক ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করা হয়েছে। এদেশে ভবিষ্যতে আবারও কোনো ফ্যাসিবাদের জন্ম হলে জুলাই-আগষ্টের মত হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী তরুণ মাঠে নেমে তাদের উৎখাত করবে। বাংলাদেশে যে ফ্যাসিবাদের সৃষ্টি হয়েছিল তারা পালিয়ে গেছে। তারা আর ফিরে আসতে পারবেনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতের যে আধিপত্য ছিল সেটা ইতোমধ্যে মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। গত ১৬ বছরে দিল্লীর কোনো অন্যায় কাজকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি। এখন তাঁদের অন্যায় কাজগুলোকে বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ করছে। তারা বাংলাদেশের কনস্যুলেটে হামলা ও পতাকা পুড়িয়েছে। তার তীব্র প্রতিবাদ করা হয়েছে। ফলে দিল্লী বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছে। এদেশে অন্য কোনো রাষ্ট্রের আধিপত্যবাদ চলবেনা।
তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি সৎ, যোগ্য লোক খুঁজছে। জাতীয় নাগরিক কমিটির মাধ্যমেই যে নতুন দল তৈরী হবে সেখানে ছাত্র, তরুণ ও বয়স্কদের অংশগ্রহণ থাকবে। সেই তারুণ্য নির্ভর দলই এগিয়ে নিয়ে যাবে এই নতুন বাংলাদেশকে। যেখানে একজন যুবক লেখাপড়া শেষ করার পর কর্মসংস্থানে জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবেনা, চাকুরীর জন্য আত্মহত্যার পথ বেচে নেবেনা। যেখানে সকল মানুষের অধিকার নিশ্চিত হবে।
যেখানে থাকবেনা কোনো বৈষম্য, রাজনৈতিক হানানহানি। মানুষের মত ও পথের নিশ্চিয়তা থাকবে। কেউ রাতের আঁধারে কাউকে মিথ্যা মামলায় ধরে নিয়ে যাবেনা। খুন, গুম হবেনা। এটাই নিশ্চিত করতে চাই জাতীয় নাগরিক কমিটি। এক্ষেত্রে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক সাথে কাজ করবে।
তিনি আরও বলেন, ৩৬ জুলাই ফ্যাসিবাদি হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ সৃষ্টির পর, দেশে অন্তবর্তি সরকার গঠিত হয়েছে। তার আগের বাংলাদেশে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, অর্থবাণিজ্য, হানাহানি, মারামারী একই গ্রপের মধ্যে মারামারি হয়ে হত্যার ঘটনাগুলো ছিল। আমরা আর সেই বাংলাদেশ দেখতে চাইনা।
এসময় তিনি জুলাই বিপ্লবের শহীদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন, এবং আহতদের এবং তাদের পরিবারের অভিভাবকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।