প্রসিদ্ধ কাপড় বিপনন প্রতিষ্ঠান মেহেরপুরের জামান গার্মেন্টসের মনিরুজ্জামান দিপু ও গাংনীর কাজল বস্ত্রালয়ের সত্বাধিকারী হাফিজুর রহমান কাজল মলিন মুখে বসে আছেন। সেই সাথে আট,দশজন কর্মচারিও পার করছেন অলস সময়।
গেল দু’বছর করোনাকালীন সময়ে অন্তত চারটি ঈদ গত হয়েছে। সেসময় ব্যবসা হয়নি। এবার কোনো বিধি নিষেধ না থাকলেও ক্রেতা সাধারণের দেখা নেই। শুধু কাজল বস্ত্রালয়ই বলবো কেনো, এমন দশা বিভিন্ন বিপনী বিতানের ব্যবসায়ীদের।
দ্রব্য মুল্যের উর্দ্ধগতি সেই সাথে কৃষকের মাঠের ফসল বেচা বিক্রি না হওয়ায় তারা বাজারমুখি হচ্ছেন না। আর যারা আসছেন তারাও বাজার যাচাই করেই ফিরে যাচ্ছেন। ফলে ক্রেতাশুন্য বিভিন্ন বিপনী বিতান। তবে হতাশ হয়নি ব্যবসায়ীরা। আরো কিছুদিন হলে বেচা বিক্রি বাড়বে বলে জানান পোষাক ব্যবসায়ীরা।
এবছর রমজানের রোজা,সেই সাথে পহেলা বৈশাখ। দুটি উৎসবেই বাঙ্গালীদের প্রাণের উৎসব। এসময় তরুণ তরুণী ও বয়স্করা উৎসব পালনের জন্য নানা অনুসঙ্গ কিনে থাকেন।
এর মধ্যে বিশেষ করে পাঞ্জাবী, সালোয়ার কামিজ ও শাাড়ি। গেল বছর পোশাকে ছিল বর্ষার ছাপ। নান্দনিক কারুকার্য খচিত বিভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবী ও সালোয়ার কামিজ ছিল তরুণ তরুণীদের একচেটিয়া পছন্দ।
এবারও দোকানিরা গেল বছরের টার্গেট নিয়ে এবার আমদানি করেছেন হরেক রকম বাহারী ডিজাইনের অনুষঙ্গ। কিন্তু জমে ওঠেনি কেনাকাটা।
ক্রেতা সাধারণদের মতে চলতি বছর দ্রব্য মুল্যের উর্দ্ধগতি ও ক্ষেতের ফসল বিক্রি করা না হওয়ায় কেনাকাটা করতে পারছেন না। আরো কিছুদিন পরে কেনাকাটায় বাজার মুখি হবেন ক্রেতারা।
ননদ লাভলী আক্তারকে সাথে নিয়ে গাংনী এসএম প্লাজায় এসেছিলেন ভাটপাড়া গ্রামের মৌসুমী খাতুন। বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরেও ডিজাইন ও সুতা পছন্দ না হওয়ার অজুহাতে শুন্য হাতে বাড়ি ফিরছেন।
তাদের পছন্দ ভারতীয় নায়িকা পুষ্পার পোশাক। বাজারে আমদানীও বেশ। সামনে সপ্তাহে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে কেনাকাটা করবেন বলে জানান তিনি।
স্কুল ছাত্রী নুসরাত জামান জানায়, পুষ্পার একটি ড্রেস পছন্দ হয়েছিল। অনেক বেশি দাম তাই নেয়া হচ্ছেনা। নতুন পোশাক পাওয়া গেলেও দাম হাকছেন বেশি। অনেকেই কেনা দামের দ্বিগুন দাম চাইছে তাই ব্যবসায়ীদের ওপর আস্থা হারিয়ে গেছে। যা কিনবো তা যাচাই করেই কিনবো ।
গাড়াডোব গ্রামের স্কুল ছাত্র তোহিদুল জানায়, কাচা বাদাম প্যান্ট কিনবো বলে বাজারে এসেছিলাম। অনেক দাম চাইছেন। বাজারের একটি পোশাকের দোকানেও মুল্য তালিকা টাঙ্গানো নেই। আমরা দামের ব্যাপারে অনেকটাই হতাশ।
এদিকে বেশ ক’জন কলেজ শিক্ষার্থীও বাজারে ঘুরছেন। পরখ করে দেখছেন হরেক রকম ডিজাইনের পোষাক।
রকি গার্মেন্টেস এর মালিক রকি জানান, মেয়েদের পুষ্পা,আর ছেলেদের কাচা বাদাম পছন্দ। সম্প্রতি ফেসবুক ভাইরাল হওয়া ভারতের ভুবন বাদ্যকরের গায়ে থাকা পোশাকের আদলে তৈরী করা হয়েছে পোশাক। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘কাচা বাদাম’।
অনেকেই এ পোশাক নেয়ার জন্য দোকানীদের কাছে আগেই বায়না দিয়েছেন। তবে বাঙ্গালী নারীদের চিরায়িত পোশাক শাড়ীর চাহিদা আগের মতই। নববর্ষে লাল পাড়ে সাদা শাড়ী অথবা গ্রামীণ কারুকার্য খচিত ডিজাইনের শাড়ী বেচা বিক্রি হলেও এবছর তা হচ্ছেনা।
গাংনীর জামান গার্মেন্টেসের মালিক জামান জানান, রোজা শুরুর আগের সপ্তাহে বেচা বিক্রির একটি ঝুল তোড় গেছে। রোজার দশ দিন হলো বাজারে ক্রেতা নেই। যারা আসছেন তারা পরে কিনবেন বলে ফিরে যাচ্ছেন। তবে তাদের আর দেখা মিলছেনা।
অনেকেই গ্রামের দোকান থেকেও কেনাকাটা সারছেন। জামান আরো জানান, ব্যবসা এমনই। আজ ক্রেতা না থাকলেও কাল হবে। ২০ রোজার পর বেচা কেনার চাপ বাড়তে পারে বলেও আশায় বুক বেঁধে আছেন তিনি। মেহেরপুর ও গাংনীর শহর ঘুরে দেখা গেছে বিপনী বিতানের একই চিত্র।
গাংনী বাজার কমিটির সভাপতি স্বপন জনান, দীর্ঘদিনের বিধি নিষেধের পর এবার মাহে রমজান শুরু হয়েছে। মাত্র দশদিন হয়েছে। এখনো অনেক সময় সামনে। রমজানের মাঝামাঝিতে বাজার জমে উঠবে।
ব্যবসায়ীরা এখন অলস সময় পার করলেও কয়েকদিন পর দোকানে দাঁড়ানো যাবেনা। তবে ক্রেতাদের সাথে বেশি মুল্য না নিতে পারে সে ব্যাপারে সকলকেই অবহিত করা হয়েছে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম বলেন, প্রচন্ড গরমে দিনের বেলায় ক্রেতা না থাকলেও সন্ধ্যার পর পোশাকের দোকানে ভীড় হয়। ক্রেতা সাধারণ ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে বিশেষ নজরদারি করতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সার্বক্ষনিক টহল দিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা পোশাকের দাম অনেক বেশি চাইলে আমার কাছে অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকদিনের মধ্যেই বাজার মনিটরিং কার্যক্রম শুরু হবে।