গাংনীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীর অভিভাবকরা যৌণ হয়রানির অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। বরং অভিভাবকদের উপর জোর প্রয়োগ করে, হামকী ধামকি দিয়ে অভিযোগ তুলে নেয়ার পায়তারা করছে ওই শিক্ষক।
পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ানোর সময় বুকের সাথে চেপে ধরে আদর, স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়াসহ বিভিন্নভাবে যৌণ হয়রানি করার অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষক মাহাবুব উল আলম কাজলের বিরুদ্ধে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন কয়েকজন অভিভাবক।
লখিত অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত নানা অজুহাতে তদন্ত করেনি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন। এদিকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী।
লিখিত অভিযোগে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুবুল হক কাজলের শাস্তির দাবি করেছেন অভিভাবকরা।
এদিকে এই ঘটনার পরপরই তার শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবকসহ এলাকাবাসী। তবে, ঘটনার পরপরই মোবাইল ফোন বন্ধ করে পালিয়ে যান শিক্ষক কাজল।
গাংনী থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী এক ছাত্রীর পিতা মকবুল হোসেন গত রবিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর তার লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন। অভিযোগপত্রে আরো কয়েকজন অভিভাবক স্বাক্ষর করেন।
এদিকে অভিযোগ পত্রটির তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাছির উদ্দীনকে নির্দেশ দিয়েছেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিভাবকগণের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক মাহাবুব উল আলম কাজল প্রাইভেট পড়ানো, জ্যামিতি শেখানো ও পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে ছাত্রীদেরকে ভোর সাড়ে পাঁচটায় তার বাড়িতে প্রাইভেট পড়ান। প্রাইভেট পড়ানোর সময় ছাত্রীদের বিভিন্ন অজুহাতে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে তার স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। এমনকি ছাত্রীদের পোশাকের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না তিনি। যৌণহয়রানির শিকার এসব শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে অন্য স্কুলে চলে যাওয়ার চিন্তা করছে। শিক্ষক কাজলের এহেন অপকর্ম এলাকার লোকমুখে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবি জানান। অভিভাবকদের অনেকেই তাদের সন্তানকে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
এবিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মাহাবুব উল আলম কাজলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও মহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়া মোহাম্মদ আহসান মাসুম বলেন, কাজল মাস্টারের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগের কথা শুনেছি। তবে এটাও শুনেছি সে নাকি বিষয়টি আপোষ করে ফেলেছে।
নব শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বড় বামন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, বিষয়টি ন্যাক্কারজনক। ঘটনা সত্য হয়ে থাকলে অথবা দোষী প্রমাণিত হলে তার অবশ্যই বিচার হোক সেটা আমি চাই। সেই সাথে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন জানান, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বা তার পরিবারের পক্ষ বা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তর থেকে আমাকে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। যথাযথভাবে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা জানান, ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি যথাযথভাবে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।
তবে ওই অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্যে গতকাল সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে আরো একটি আবেদনপত্র দাখিল করা হয়েছে। সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনাটির আসল রহস্য উন্মোচন করে প্রকৃত দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।