প্রায় ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে গাংনী পৌর সভার মৎস্য আড়ত নির্মাণ প্রকল্পে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এসব নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করলেও পৌর কর্তৃপক্ষের এগুলো নিয়ে কোন মাথাব্যাথা নেই অভিযোগ স্থানীয়দের।
পৌর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এডিবি ও সেলামীর অর্থায়নে ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে গাংনী মৎস্য আড়ত নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ২০ কক্ষ বিশিষ্ট আড়ৎ, ৩৩০মিটার এইচবিবিকরণ রাস্তা, ও ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। কুষ্টিয়ার মেসার্স রোমানা এন্টারপ্রাইজ কাজটির দায়িত্ব পেলেও কাজটি সাব কন্ট্রাক্ট নিয়েছেন গাংনীর মেসার্স মাম এন্টারপ্রাইজ।
ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধীকারী সাহাবুদ্দীন রাজা ও বাঁশবাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম এ কাজ করছেন বলে জানান পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী শামিম রেজা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ঘরসহ এইচবিবিকরণ রাস্তার কাচে নিম্মমানের ইট, মাটি মিশ্রিত বালি, সিমেন্ট ও নিম্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই হেয়ারিং বন্ডের রাস্তা নষ্ট হয়ে যাবে আশংকার করছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ী জানান, প্রথমদিকে এখানে খুবই নিম্মমানের ইট দিয়ে কাজ করা হয়েছে। স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুললে পরবর্তিতে কিছু ইট ভালো দিয়েছে। কিন্তু তার আগেই অনেক ইট নিম্মমানের ব্যবহার করা হয়েছে। সরকার টাকা খরচ করে আড়ৎ করে দিলেও নিম্মমানের ইটের কারণে বেশিদিন টিকবে না। কিন্তু ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ মুখ খুলছে না।
কাজে তদারককারী গাংনী পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল কবীর ঠিকাদারের পক্ষ নিয়ে বলেন, প্রথম দিকে কিছু ইট নিম্মমানের এসেছিলো। সেই ইটগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সব কাজ এক নম্বর ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীও ঠিকঠাক দেওয়া হচ্ছে। আমি নিজে দাড়িয়ে থেকে কাজের তদারকি করছি।
উপ-সহকারী প্রকৌশলীর মত একই সুরে কথা বলেন সহকারী প্রকৌশলী শামিম রেজা। তিনি বলেন, প্রথমদিকে কিছু ইট নিম্মমানের দেওয়া হয়েছে শুনে সেখানে উপ-সহকারীকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি জানিয়েছেন, নিম্মমানের ইট সরিয়ে ভালো মানের ইট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো সেখানে নিম্মমানের ইট রাখা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে অনেক নিম্মমানের ব্যবহার করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এক সপ্তাহ ধরে ছুটিতে আছি।
তিনি আরো বলেন, কুষ্টিয়ার রোমানা এন্টারপ্রাইজ কাজটি পেয়েছে। তাদের সাথে সাহাবদ্দিন রাজা ও মাঝহারুল ইসলামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাম এন্টারপ্রাইজ কাজটি কিনে নেয়।
রোমানা এন্টারপ্রাইজের মালিক ফারুক হোসেন বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ করলে ভালো করে করতে হবে। নতুবা আমার প্রতিষ্ঠানের নামে ভবিষ্যতে আর কাজ করতে দেব না।
ঠিকাদার মাঝহারুল ইসলাম বলেন, আমি সাহাবদ্দিন রাজার সাথে চলাচল করি। যে কারণে মানুষ মনে করে আমি আমি তার পার্টনার। কিন্তু আমি কোন ঠিকাদারী কাজ করি না।
মাম এন্টার প্রাইজের স্বত্ত্বাধীকারী ঠিকাদার সাহাবদ্দিন রাজা বলেন, ইটের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছু ইট নিম্মমানের দেওয়া হয়েছিলো। ইঞ্জিনিয়ার মহোদয় বলার পর ইট উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে গাংনী পৌর মেয়র আহমেদ আলী মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর আমি নিজে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ারকে নিম্মমানের ইট সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছি। তারপরও যদি নিম্মমানের ইট ব্যবহার করা হয় বিল দেওয়া হবে না।