মেহেরপুরের গাংনীতে পলাশবাড়ি আদর্শ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্রতারণা। চাকুরি দেবার নামে অর্থবানিজ্য। গ্রাহকদের টাকা নিয়ে লাপাত্তা সংস্থার মালিক। দরিদ্র ব্যাক্তিদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলনে নিয়োজিত মাঠকর্মীরা দিশেহারা। আত্নগোপনে শাখা ব্যাবস্থাপক। স্বাক্ষরিত সাদা স্ট্যাম্প নিয়ে মাঠকর্মীদের দেখে নেবার হুমকি অব্যহত মালিক পক্ষের।
জানাগেছে, পালাশ বাড়ি আদর্শ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমতিরি নামে একটি এনজিও সংস্থা (যার গভঃ রেজিঃ নং-০০৫৩৪) । সরকারি কোন প্রকার অনুমোতি বা অনুমোদন না নিয়েই গাংনী পৌর এলাকায় চৌগাছায় একটি পরিত্যাক্ত ঘর ভাড়া নিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ শুরু করেন।
মাঠ পর্যায়ে কাজ করার লক্ষ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৯ জন মাঠ কর্মী ও একজন শাখা ব্যবস্থাপক নিয়োগ দেয়া হয়। আগ্রহী প্রার্থীদের আকর্ষণীয় বেতনের লোভ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে নেয়া হয় ৫০ টাকা মুল্যের স্বাক্ষরিত একটি সাদা ষ্ট্যাম্প ও দশ হাজার টাকা জামানত। কয়েক জনকে নিয়োগ দেয়া হয় নামে মাত্র। অধিকাংশই আজো নিয়োগ পত্র হাতে পাইনি বলে জানিয়েছেন মাঠকর্মীরা।
নিয়োগ পত্র না দেয়া হলেও সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী একমাস আগে থেকেই শুরু হয় গ্রাহক সংগ্রহের কাজ। মাঠকর্মীরা স্বল্প সুদে ঋণ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে সদস্য ভর্তি শুরু করেন। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ১৬১ জন।
এই ১৬১ জনের কাছ থেকে ভর্তি ফিস বাবদ ৩০ টাকা, অফিস চার্জ ২০ টাকা, পাশবই বাবদ ২০ টাকা জমা নেয়া হয়। ঋণ দেবার কথা বলে ভর্তিকৃত সদস্যদের কাছ সেভিং চার্জ হিসেবে জমা নেয়া হয় ১০ হাজার টাকায় ১ হাজার টাকা। মাঠকর্মীরা তাদের উত্তোলনকৃত টাকা ম্যানেজার মাসুদ রানা’র কাছে জমা দিতেন প্রতিদিন। এভাবে গাংনীর বিভিন্ন গ্রামের দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা আদায় করেন মাঠকর্মীরা।
মাঠকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একমাস যাবত সদস্যদের মাঝে ঋণ দেবার কথা থকলেও সংস্থা কাউকে ঋণ দেয়নি। সদস্যদের কাছ থেকে শুধু টাকা নিয়েই চলেছেন। এ নিয়ে মাঠকর্মীদের মধ্যে সন্দেহের সৃস্টি হয়। ম্যানেজার মাসুদ রানার সাথে শুরু হয় মাঠকর্মীদের বাকবিতন্ডা।
বিষয়টি জানাজানি হলে চৌগাছাস্থ অফিসে গিয়ে দেখা গেছে ভুতুড়ে পরিবেশে ভগ্ন জরাজীর্ণ একটি ঘরে সাইনবোর্ড সর্বোস্ব একটি অফিস। তিনটি টেবিল আর কয়েকটি চেয়ার বসিয়ে সাজানো হয়েছে অফিসের ভিতর। অফিস দেখে মনেই হবেনা এখানে কেউ বসবাস করেন কিংবা অফিস করেছেন।
তবুও বসে রয়েছেন আরফিনা খাতুন, জুলেখা খাতুন ও লিজন নামের তিন মাঠকর্মী। কথা হয় তাদের সাথে। তারা জানান, আমাদের কাউকে আজো নিয়োগ পত্র দেয়নি পলাশবাড়ি সমবায় সমিতি লিমিটেড। বিভিন্ন গ্রাম থেকে টাকা সংগ্র করে তারা ম্যানেজারের কাছে প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিন জমা রাখেন। সংস্থার মালিক জাহিদ হাসান নামের এক ব্যাক্তি আমাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ শুরু করার তাগিদ দিয়েছেন। আমাদের সাথে আর দেখা হয়নি সংস্থার মালিক জাহিদ হাসানের। মালিকের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ ও কথা হয় ম্যানেজার মাসুদ রানার ।
সমবায় র্কতৃক রেজিষ্ট্রেশনের কাগজপত্র দেখতে চাওয়া হলে জ কাগজ পত্র নেই বলে জানিয়েছেন সংস্থার ম্যানেজার মাসুদ রানা। তবে কাগজপত্র প্রক্রিয়াধীন বলে দাবী করা হয়। মাইক্রোক্রেডিট প্রোগ্রাম শুরু করতে হলে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আছে কিনা তা জানতে চাইলে তা নেই ভুইফোড় এ সংস্থার। সম্পূর্ণ ভুয়ার ওপর চলছে তাদের কার্যক্রম।
মাসুদ রানার সাথে সংস্থার বৈধ্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সে থেকেই অত্নগোপনে রয়েছেন ম্যানেজার মাসুদ রানা। তবে তার সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি পলাশবাড়ি সমবায় সমিতির মালিক জাহিদ হাসনকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন।
মাসুদ রানা জানায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে তিনি চাকুরি নিয়েছেন। তিনি এখন নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বলে জানান। ম্যানেজার থেকে শুরু করে স্টাফদের কেউ মালিক জাহিদ হাসানের পরিচয় জানেন না। তবে তাদের কাছে জাহিদ হাসান কখনো কুষ্ঠিয়া, কখনো খলিশাকুন্ডি আবার কখনো মেহেরপুরের ছেলে বলে নিজেকে জাহির করতেন।
সর্বশেষ তিনি মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের বলে একটি সুত্র জানিয়েছে। তিনি বেশ কিছুদিন মালেশিয়া ছিলেন। প্রবাস খেটে দেশে ফিরে এনজিও’র ব্যাবসা করার পরিকল্পনা করে মানুষকে প্রতারিত করে চলেছেন।
বিষয়টি এলকায় জানাজানি হলে গত মঙ্গলবার মাঠকর্মীরা ম্যানেজার মাসুদ রানার মোটরসাইকেল ও সদস্যদের কাছ থেকে সংগৃহীত কিছু টাকা জব্দ করে অফিস ঘর মালিকের হাতে জমা রাখেন। পরে ঘর মালিক গাংনী থানা পুলিশ আটকৃত মোটরসাইকেল ও টাকা পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন। জাহিদ হাসান মাঠকর্মীদের দেয়া স্বাক্ষরিত সাদা স্ট্যাম্প দিয়ে দেখে নেবার হুমকি দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মাঠকর্মীরা।
গত মঙ্গলবার পর্যন্ত জাহিদ হাসান তার সংস্থার মাঠকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করলেও বুধবার থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ রেখেছেন। জাহিদ হাসানের সাথে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। ফলে বক্তব্য লেখা হয়নি।
গাংনী থানার ওসি ওবাইদুর রহমান জানান, মোটরসাইকেল ও টাকা পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে তবে শুক্রবার সংস্থার মালিক এখানে আসবেন। তবে গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায়কৃত টাকা ফেরদ দিতে হবে।
গাংনী উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জানিয়েছেন উক্ত রেজি নাম্বারে গাংনী উপজেলায় কোন সমবায় সমিতিকে রেজিষ্ট্রেশন দেয়া হয়নি। যে রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার সাইনবোর্ডে ব্যাবহার করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নিলে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন হবে।
এনজিও ফোরামের সভাপতি মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন জানান, এরা এক ধরনের প্রতারক। এরা এলাকার দরিদ্র মানুষকে বোকাবানিয়ে শোষণ করে পালিয়ে যায়। এদের বিষয়ে সকলকে সচেতন হওয়া দরকার। সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহাম্মেদ জানান, প্রায় একমাস ধরে যারা তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন মানুষকে খোজ খবর নিয়ে মাঠ-পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে কাজ করতে হতো। এরা প্রতারণার ফাঁদে ফেলে মানুষের টাকা হাতিয়ে নেবার একটি চক্র। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া দরকার। না হলে এখান থেকে পালিয়ে অন্যদের প্রতারিত করবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান জানান, পলাশবাড়ি সমবায় সমিতি নামের কোন সংস্থা গাংনীতে আছে বলে আমার জানা নেই। কেউ আমাকে এ ব্যাপারে অবহিত করেনি।
মেপ্র/ আরপি