মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবার মান নিয়ে উপজেলা বাসির মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা দেওয়ার নামে চলছে সাধারণ রোগীদের হয়রানি। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটির জেনারেটর, এমবুলেন্স সেবাও বন্ধ রয়েছে বলে সরেজমিনে দেখা যায়।
সেবার মানের বিষয়ে এর আগে কর্তব্যরত ডাক্তাররা সারাদেশের ন্যায় করোনা পরিস্থিতির মধ্যে নিরাপত্তার অভাবে সেবা দিতে নিজেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন বলে জানা যায়।
পরে ডাক্তারদের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমানের উদ্যোগে ও উপজেলা পরিষদের সহযোগিতায় ৪৫টি পি পি ই সর্বরহ করা হয় যাতে চিকিৎসকরা নির্ভয়ে মানুষকে সেবা দিতে পারে। এছাড়াও একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আরও ৫টি পি পি ই প্রদান করেন।
এর পরও প্রতিষ্ঠানটিতে ডাক্তারের উপস্থিতিও থাকেনা বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির সয়শ্লিষ্ট একজন।
প্রতিষ্ঠানটিতে দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাদনান সাকিব গত বছর ডিসেম্বর মাসে যোগদানের পর থেকেই হাসাপাতালে অনুপস্থিত রয়েছেন। জানা যায় তিনি গাংনী চৌগাছা এলাকায় নিজ বাসাতে রোগী দেখেন নিয়মিত অথচ সরকারি বেতন সুবিধা নিয়েও হাসাপাতালে আসেননা। তবে এ বিষয়টিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এম রিয়াযুল ইসলাম অস্বীকার করে বলেন তিনি প্রতিদিনই অফিসে আসেন।
এদিকে গত শনিবার গাংনী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড এর মালসাদহ এলাকার ইছারদ্দি নামের একটি রোগী অসুস্থ্য অবস্থায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে প্রথমে তাকে কোন চিকিৎসক না দেখে জরুরী বিভাগেই ফেলে রাখে দেওয়া হয়না কোন ব্যবস্থা পত্র। স্বজনরা যখন ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে ঐ মুহুর্তে কর্তব্যরত ডাক্তার রোগীর কাছে এসে তাকে ভর্তি করার পরামর্শ দিলে তাকে ভর্তি করা হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তার তাকে ইনজেকশন দিলে রোগীটি মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। স্বজনদের অভিযোগ তাকে সময় মতো সেবা দিলে বেঁচে যেতে পারতো। এনিয়ে স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করে।
এর পরের দিনই গাংনীর ভাটপাড়া গ্রামে সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হয়ে আড়াই বছরের একটি কন্যা শিশু হাসপাতালে আসলে কর্তব্যরতা ডাক্তার নুরুন্নাহার জরুরী ভিত্তিতে অক্সিজেন দেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিতে অক্সিজেন নেই বলে জানালে স্বজনদের আহাজারি দেখে একজন সাংবাদিক স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে ফোন দিলে তিনি সিভিল সার্জনের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন। সিভিল সার্জনের নির্দেশে তখনই হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন ব্যবস্থা করা হয়। স্বজনদের অভিযোগ এখানে গরীবদের কোন সেবা নাই কারণ ঐ সময় সাংবাদিক যদি যোগাযোগ না করতো তাহলে অক্সিজেন পাওয়া যেতনা।
শুধু তাই নয় অক্সিজেন মিললেও ডাক্তার শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত রেফার্ড করে দেন। কিন্তু এখানেও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা ব্যার্থতার পরিচয় দেয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুটি এ্যম্বুলেন্স রয়েছে দুটোই বিকল হয়ে আছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। যে কারণে আহত শিশুটিকে সময় মতো রেফার্ড করা যায়নি। পরে শিশুটির স্বজনরা মাইক্রো গাড়ির ব্যবস্থা করলেও ততক্ষণে শিশুটি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে হেরে যায়। সে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে বর্তমানে সেবার নামে চলছে রিতিমত তামাশা। স্থানীয়দের নানান অভিযোগ থাকলেও এ নিয়ে কারর কোন মাথা ব্যাথা নেই বলে জানা যায়।
এদিকে অব্যবস্থাপনা বিষয়ে জানতে চাওয়ার চেষ্টা করলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ রিয়াযুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্ট করা হলে তিনি এমপি সাহিদুজ্জামান খোকনের বাসায় আছেন বলে জানা যায়। পরে তার সাথে প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন আসলে সেই সময় অক্সিজেন ছিলনা পরে ব্যবস্থা করা হয়। তিনি জেনারেটরের বিষয়ে বলেন জেনারেটরটি হঠাৎ করে বিকল হয়ে গেলে পরের দিনই মেরামতের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ্যম্বুলেন্সের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের তিনটি এ্যম্বুলেন্স রয়েছে যার একটি একেবারেই বিকল ব্যবহার অযোগ্য আরেকটিও কোন রকমে স্বল্পদুরে যাওয়া যেতে পারে। আর যেটা ব্যবহার উপযোগি সেটার ফিতা কেটে যাওয়ার কারণে পড়ে ছিল। পরে অনেক খুঁজাখুঁজি করে মেকানিক ডেকে তা মেরামতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন আমি এই উপজেলা বাসিকে স্বাস্থ্য সেবা খাতে অনেক কিছু দিয়ে যেতে চাই।