গৃহবধূ সালমা। চার বছর বয়সী শিশু পুত্র সাঈদকে নিয়ে ভালই কাটছিল তাদের সংসার। কিন্তু এ সুখ বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। বহু বিবাহে অভ্যস্থ স্বামী হাবিবুর তাদের এ সুখের ঘরে আগুন লাগিয়েছে। মিথ্যা অপবাদে তাকে তালাক দিয়ে বাপের বাড়ীতে ফেরত পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে পৌরসভা ও গাংনী থানায় দফায় দফায় বৈঠক ডাকা হলেও একটি রাজনৈতিক দলের ছত্র ছায়ায় থেকে বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন হাবিবুর। শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের জুনে পশ্চিম মালসাদহ গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে সালমা খাতুনের সাথে বিয়ে হয় এ উপজেলার হাড়াভাঙ্গা গ্রামের জিরাফত আলীর ছেলে হাবিবুর রহমানের সাথে। বেশ সুখেই ছিল তার জীবন। বিয়ের বছর খানেক পরে সালমার কোল জুড়ে আসে এক পুত্র সন্তান। নাম রাখা হয় সাঈদ। বছর দুয়েক পর আবারও সন্তান সম্ভাবা হয় সালমা একের পর এক নির্যাতনের কারণে সে সন্তান আলোর মুখ দেখেনি। নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকারও করেছেন হাবিবুর। স্বামীর অসহ্য নির্যাতনের পরও শুধু ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে পাষণ্ড স্বামীর সংসার করছিল সে। কিন্তু বিধি বাম। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে তালাক দেয়া হয়েছে।
অসহায় সালমা জানান, হাবিবুরের প্রথম স্ত্রীর একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। অপ্রাপ্ত বয়স্কা ওই কন্যার বিয়ের কথা বার্তা চলছিল এক সেনা সদস্যর সাথে। কিন্তু মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্কা ও হাবিবুর বহু বিবাহে অভ্যস্ত এবং একাধিক বৌ তালাকের ঘটনায় বর পক্ষ তার মেয়েকে বিয়ে করতে চায়নি। এর সন্দেহের তীর ছোঁড়ে ছালমার দিকে। মেয়ের বিয়ে ভাঙ্গার অপবাদে চলতি বছরের ২৯ শে জুন মেহেরপুর নোটারী পাবলিক গোলাম মোস্তফার কার্যালয়ে সালমাকে তালাক প্রদান করে।
এ ব্যাপারে গাংনী পৌরসভা বরাবর আবেদন করেন সালমা। পৌরসভা স্বামী হাবিবুর ও বাদী সালমাকে কয়েক দফা হাজির হবার জন্য নোটিশ প্রদান করলেও হাবিবুর তা অগ্রাহ্য করে। পরে গাংনী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হলে এসআই নুরুল ইসলাম কয়েকবার উভয় পক্ষকে থানায় হাজির হবার নোটিশ প্রদান করলেও বিবাদী হাবিবুর বৈঠকে উপস্থিত হননি। ফলে সালমাকে আদালতের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। অবশেষে মেহেরপুর জেলা পরিষদের সদস্য মজিরুল ইসলাম বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নেন। শনিবার উভয় পক্ষকে হাজির হবার জন্য তার কার্যালয়ে আহবান জানান।
একটি সূত্র জানায়, হাবিবুর বহু বিবাহে অভ্যস্ত। প্রথমে গ্রামের কুসুম নামের একটি মেয়েকে বিয়ে করে বিদেশ গমন করেন। বিদেশ থেকে ফিরে কুসুমের চারিত্রিক দোষ দিয়ে তালাক প্রদান করে একই গ্রামের কুলসুম নামের আরেক নারীকে বিয়ে করেন। কোন সন্তানাদি না হওয়ায় তাকেও তালাক দিয়ে সালমাকে বিয়ে করেন। এখন সালমাকে মিথ্যা অজুহাতে তালাক দিয়ে গ্রামেরই অপর একটি মেয়ের সাথে বিয়ের শলাপরামর্শ চালিয়ে যাচ্ছেন।
নির্যাতিতা সালমা তার অধিকার ফিরে পেতে সরকার ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।