বিস্ফোরকের বারুদ শরীরে নিয়ে ঘুরছেন আওয়ামীলীগ কর্মী জিন্দার আলী। জামায়াত বিএনপি কর্তৃক বিস্ফোরকের বারুদ অর্থের অভাবে শরীর থেকে বের করতে না পারায় যন্ত্রনায় কাতর হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে জিন্দার আলী। শরীরে বারুদ থাকায় কর্মক্ষমহীন জিন্দার চিকিৎসার টাকা চেয়ে বিভিন্ন মহলের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ।
শরীর থেকে গুলির বারুদ অপসারণ করা না হলে যে কোনো সময় মৃত্যুর মত ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের মৃত রহিম বকসের চার ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে জিন্দার আলী।
শিশু অবস্থায় পিতাকে হারিয়ে স্থানীয় এক গৃহস্থের বাড়িতে রাখালের কাজ করে বেড়ে ওঠে। কিশোর বয়সেই স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সাথে তার মেলামেশা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুব রহমানকে চোখে না দেখলেও বঙ্গবন্ধুই দেশ নায়ক একথা জিন্দার ঠিকই বুঝতো। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামীলীগকে ভালবেসে বিভিন্ন মিটিং মিছিলের আগে থাকতো জিন্দার।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা জানায়, ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াতের সাথে স্থানীয় নওয়াপাড়া বাজারে আওয়ামীগের সাথে সংঘর্ষ বাধে। আওয়ামীলীগের লোকজনকে লক্ষ্য করে গুলি করে বিএনপি জামায়াতের কর্মীরা। বিকট শব্দে মানুষ আতংকিত হয়ে পড়ে। সে গুলিতে (গুলির কার্তুজে) স্থানীয় এক মহিলাসহ জিন্দার আলী আহত হয়। তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশের প্রায় অর্ধশত বারুদ শরীরের প্রবেশ করে।
স্থানীয়রা মূমুর্ষ অবস্থায় জিন্দার আলীকে উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সে সময় ৪/৫ টি গুলির বারুদ শরীর থেকে বের করা হলেও প্রায় ২০ খেকে ২৫ টি বারুদ আজো তার শরীরে রয়ে গেছে। সেসময় বিএনপি জামাতের অত্যাচারে গ্রামছাড়া হয়ে প্রায় তিন বছর পালিয়ে বেড়াতে হয় আহত জিন্দারকে।
ঘরবাড়ির অস্তিত্বটুকুও হারিয়ে ফেলে। আর্থিক ভাবে মোটা টাকার ক্ষতি নিয়ে এলাকা ছাড়া হয়ে পড়ে। পরে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে জিন্দার আলী তার নিজ গ্রাম নওয়াপাড়ায় ফিরে আসে। পিতৃহারা হয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয় তাকে ।
জিন্দারের মা ছানোয়ারা বেগম জানান,জিন্দারের বয়স যখন (৩) দিন তখন তার বাবা মারা যায়। আমি পরের বাড়িতে ঝী এর কাজ করে জিন্দার সহ তাদের চার ভাইকে লালন পালন করে বড় করি। আমাদের পরিবার একটি আওয়ামীলীগ পরিবার। আমার স্বামী বেঁচে থাকতে কিন্তু দলকে ভাল বেসে আমার ছেলে শরীরে গুলির বারুদ নিয়ে যখন যন্ত্রনায় চিৎকার করে তখন আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা।
জিন্দার আলীর বাড় ভাই বছর তিনেক আগে ফুসফুসে ক্যান্সার হয়ে মারা যায়। সে শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ছোট ছেলে জিন্দারকে হারাতে হবে তা সহ্য করতে পারবোনা। এ কথা বলতেই চোখের পানিতে বুক ভেজান জিন্দারের মা ছানোয়ারা। দু’ ভাই থাকলেও তাদের অভাবের সংসার। সংসার চালিয়ে তাকে আর চিকিৎসা করানো সম্ভভ হয়নি।
অর্থের অভাবে মাথা ও শরীরে বিস্ফোরনের বারুদ বের করতে না পারায় একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে জিন্দার।
পাবনায় মাসনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে মানসিক বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ মহম্মদ আলীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ্যতা পেয়েছেন। তবে যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন তাকে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। অথচ টাকার অভাবে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন । ফলে জিন্দার আবারো মানসিক ভারসাম্য হারাতে বসেছেন।
আওযামীলীগকে ভাল বেসে জীবন বিপন্ন হতে চলা জিন্দার এপর্যন্ত সরকারি কোন সাহায্য সহযোগী পাইনি ।
শরীরে বিস্ফোরনের বারুদ নিয়ে একেবারেই কাজকর্ম করতে পারেনা সে। সহায় সম্বলহীন দিনমজুর জিন্দার আলীর শরীরে তিব্র যন্ত্রনা নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তার শরীরের বারুদ অপসারণ করতে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহযোগীতা।
এ ব্যাপারে নওয়াপাড়া গ্রাম আওয়ামীলীগের সভাপতি দিনমহম্মদ জানান, দলকে ভালো বেসে জামাত বিএনপি হটাও অন্দোলনে অংশগ্রনে জিন্দারের যে ভুমিকা ছিল তাতে তার জীবন বিপন্ন হতে পারতো। কিন্তু ভাগ্যের জোরে সে কোন রকমে প্রাণে বেঁচে আছে । সরকারি সহযোগীতা প্রাপ্যতায় তার নাম আগে থাকা উচিৎ।
কাথুলী ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানা বলেন, তাকে এপর্যন্ত কোনো প্রকার সহযোগীতা করা হয়নি, তবে সুযোগ পেলেই তাকে সহযোগীতা করা হবে। আর্থিক সাহায্য সহযোগীতা পেতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদনে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা শুপারিশ করেছেন।
আকতারুজ্জামান,গাংনী