গাংনীর রেজাউল চত্বরে বটগাছের ছায়ায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন চর্মকার সমর দাস। আগে যেখানে চারশ’ টাকা থেকে পাঁচশ’ টাকা আয় রোজগার হতো সেখানে এখন সারা দিনে আয় হয়েছে তার মাত্র ৬০ টাকা। সংসারে রয়েছে স্ত্রী পুত্রসহ ৬ জন। এ টাকা দিয়ে কীভাবে তাদের মুখে আহারের ব্যবস্থা করবেন তিনি? এ চিন্তায় মগ্ন সমর দাস। লকডাউন আর করোনার কারণে লোকজন বাজারে না আসায় আয়ের পথটি তার বন্ধ। সরকারী কোন সহযোগিতাও পাননি তিনি। শুধু সমর দাস নয় তার মতো ফুটপাথের সব কারিগরদের অবস্থা একই।
গাংনী উপজেলা শহর, বামন্দী বাজার, রাইপুর, হেমায়েতপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অন্ততঃ পাঁচ শতাধিক ছোট ছোট কারিগর ফুটপাথে ব্যবসা করতেন। জিবন জীবিকার তাগিদে কেউ চর্মকার, তালা, ছাতা, হারিকেনসহ ছোট ছোট মেরামতের কাজ করতেন। লকডাউনের কারণে আজ তাদের জিবন জীবিকার পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েকজন ফুটপাথে বসলেও প্রশাসনের তৎপরতায় অধিকাংশ কারিগর শহরে বসতে না পেরে গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন।
গাংনীর হাটবোয়ালিয়া রোডের তালার কারিগর আব্দুর রশীদ জানান, প্রতিদিন তালা মেরামত ও চাবি তৈরীসহ টুকিটাকি কাজ করে তিন চারশ টাকার কাজ হতো। লকডাউনের কারণে মানুষের চলাচল না থাকায় আয়ের পথটি প্রায় বন্ধ। দিনে এখন একশ টাকা আয় করা দ্বায় হয়েছে। একই কথা জানালেন কারিগর আলাউদ্দীন।
ছাতার কারিগর আল আমিন জানান, রোদ কিংবা বৃষ্টি সব সময় ছাতার ব্যবহার হয়। আগে লোকজনের সমাগম ছিল তখন প্রতিদিন পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা রোজগার হতো। এখন আয় নেই। গ্রামে গ্রামে ঘুরে একশ দেড়শ টাকা হয়। তা দিয়ে সন্তানদের আহার যোগানো ও পড়া লেখার খরচ মেটানো দ্বায়। লকডাউনে রুটি রুজি কেড়ে নিয়েছে। সরকারী কোন সহযোগিতাও পাননি ।
কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের স্বল্প পুঁজিতে ফুটপাথে থেকে কোন রকম দিনপাত চলছিল। এ পথটি বন্ধ অথচ সরকার তাদের জিবীকার কোন ব্যবস্থা করছেন না। সামান্য সহযোগিতা পেলে তারা বেঁচে যেতে পারতো।
এ ব্যাপারে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, লকডাউনের কারণে ফুটপাথের ব্যবসায়িদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে সরকারী সুবিধা আসলে তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রদান করা হবে।