মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাস্তা সংস্কারের প্রভাবশালী ঠিকেদার নির্মাণ সামগ্রি রেখে দেয়াতে গত একমাস ধরে বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। গতকাল রোববার ঈদের ছুটি শেষে বিদ্যালয়টি খোলার পর স্কুল মাঠে পিচগলানো জন্য জ্বালানো চুলোর ধুয়াতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ক্লাসে থাকতে পারেনি। ফলে বাধ্য হয়ে ফের তিনদিনের জন্য স্কুল ছুটি ঘোষণা করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। গত দুইমাস আগে স্কুল মাঠে রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। বিদ্যালয়েই নির্মাণ শ্রমিকরা থাকেন। ফলে স্কুলের মাঠে খেলাধুলা করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। এই অবস্থা আরো কিছুদিন থাকবে বলে মনে করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানান, দুইশতাধিক শিক্ষর্থীী রয়েছে বিদ্যালয়টিতে। তাদের কোলাহল ও হইহুল্লোড়ে মুখোর থাকত বিদ্যালয়টির খেলার মাঠ। গত মে মাস থেকে বিদ্যালয়ের মাঠটি দখল করে রেখেছে সংস্কার কাজের নির্মাণ সামগ্রী। শুধু মাঠেই নয়, বিদ্যালয়ের বারান্দা শ্রমিকদের জন্য রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা করেছেন নির্মাণ কাজের ঠিকাদার। ঠিকেদার সরকারি দলের সহযোগি সংগঠন গাংনী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
সরেজমিনে গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামে ‘ভোমরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ’এ দেখা যায়- রাস্তা সংস্কারের সরঞ্জাম রেখে দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা দখল করে রাখা হয়েছে। বিদ্যালয় মাঠেই আগুন জ্বালিয়ে বিটুমিন গলানো হচ্ছে। এ কারণে কালো ধোঁয়ায় পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের। গ্রামের একমাত্র বড় এ স্কুল মাঠটিতে ভ্যাপসা গরমে বিকেল থেকে স্থানীয় বিভিন্ন বয়সের মানুষ উন্মুক্ত মাঠে বসে থাকতেন। তাও বন্ধ হয়ে গেছে। বিকেলে গ্রামের কিশোর যুবকদের খেলা ধূলা করতে পারছেনা মাঠ জুড়ে নির্মাণ সামগ্রির কারণে। ঠিকেদার প্রভাবশালী হওয়ার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গ্রামের কেউ আপত্তি জানাতে পারেনি নির্মাণ সামগ্রি রাখায়।
রোববার বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের দুই–তৃতীয়াংশ জায়গায় ইটের কংক্রিট, বালু, মাটি, পাথর, বিটুমিনের ড্রাম স্তুপ করে রাখা হয়েছে। বিটুমিন গলানোর জন্য বানানো চুলা স্থাপন করা হয়েছে বিদ্যালয় ভবনের পাশেই। ওই চুলাতে আগুন জ্বালালে ধোঁয়া বিদ্যালয়ের ভবনে প্রবেশ করে। সারা মাঠে ছোট ছোট কংক্রিট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ছড়িয়ে থাকা নির্মাণ সামগ্রী অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। যা বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা থেকেই যায়। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, খেলাধূলার অনুশীলন দুরে থাক, ক্লাসরুমে যাতায়াতেই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দেখে শুনে না চললে পায়ে পেরেক ফোটার ভয় তাড়া করে।্ ঈদের আগেও মাঠ জুড়ে নিমাণ সামগ্রি থাকার কারণে নোটিশ ছাড়া স্কুল ছুটি দেয়া হয়েছিল। রোববার স্কুলে আসার পর ফের তিনদিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাসেদুল ইসলাম জানান- বিদ্যালয় মাঠে নির্মাণ সামগ্রী রাখার নিয়ম নেই। যখন নির্মাণ সামগ্রি রাখা হয় তখন বিদ্যালয় বন্ধ ছিলো। ফলে আপত্তি জানানোর সুযোগ মেলেনি। স্কুল মাঠে চুলো তৈরী করে বিটুমিন গলানো হচ্ছে। বিটুমিন গলানো ধুয়াতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা ভেবে তিনদিনের জন্য ঐচ্ছিক ছুটি দেয়া হয়েছে।
ঠিকাদার মজিরুল ইসলামের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। অনেক বার ফোনের পর মহিলা কন্ঠে জানানো হয় ‘তিনি স্টোকের রোগি। ঘুমিয়ে আছেন।