মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিকে রাজাকার মুক্ত করার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘রাজাকার, অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিমুক্ত আওয়ামী লীগ গঠন বাস্তবায়ন পরিষদ’ নাম দিয়ে গাংনীর যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, কৃষকলীগের কয়েকজন নেতা সংবাদ সম্মেলন করেছে।
মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাবে সোমবার দুপুরে ওই পরিষদের আহবায়ক মো. ইসমাইল হোসেন (গাংনী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি) লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
তিনি বলেন- ১৮ বছর পর গত ১০ এপ্রিল ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে কাউন্সিলরদের অভিযোগ পাশ কাটিয়ে গাংনী উপজেলা কমিটি গঠন করছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক।
যার সভাপতি গাংনীর এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন ও সম্পাদক মকলেছুর রহমান মুকুল উভয়ে রাজাকারপুত্র। বিএম মোজাম্মেল হক কাউন্সিলরদের অভিযোগ আমলে না নেয়াতে তারা সম্মেলন বয়কট করেন বলে দাবি করেন। সাহিদুজ্জামান খোকনের পিতা আব্দুল গনি বিশ্বাস ৭১ এ গণহত্যাকারী।
তার নিজ গ্রাম গাংনীর তেরাইল গ্রামে ৭১ সালে নস্কর শাহর মাথায় ঘাসের বোঝা চাপিয়ে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার লাশ ছয়দিন পর্যন্ত দাফন করতে দেয়নি। গ্রামের ওমর শাহর বাড়িতে পাকসেনা লেলিয়ে দিয়ে তার স্ত্রীকে ধর্ষন করে।
এসময় ওমর আলী ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুই পাকসেনাকে কুপিয়ে হত্যা করে। পাকসেনাদের গুলিতে আহত ওমর আলী ভারতে পালিয়ে গিয়ে মারা যায়। বিভিন্ন বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। মহাব্বতপুরের মুক্তিযোদ্ধা হবিবার রহমানের বাবাকে ধরে নিয়ে গিয়ে ১১দিন নির্যাতন শেষে গুলি করে হত্যা করে।
নবগঠিত গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাংনীর আড়পাড়া গ্রামের মকলেছুর রহমান মুকুলের পিতা আব্দুল মান্নানও কুখ্যাত রাজাকার। মান্নান ভাটপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সাজদার ফকিরের বাড়িতেসহ গ্রামজুড়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাঠ করে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নির্যাতিত পরিবারগুলোসহ মুক্তিযোদ্ধারা পিটিয়ে হত্যা করে রাজাকার আব্দুল মান্নানকে।
নুন আনতে পান্তা ফুরানো সাহিদুজ্জামান খোকন গাংনী আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর বর্তমানে আলীশান বাড়ি তৈরী করেছেন দূর্নীতির টাকায়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে-গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে রাজাকারপুত্র মুক্ত কমিটি না হলে পরবর্তীতে কঠিন কর্মসূচি দেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন, গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোসারফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিরুল ইসলাম।
প্রসঙ্গে গাংনীর এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন জানান-তিনি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, ১৮ বছর গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ হয়েই প্রধানমন্ত্রী তাকে নৌকা প্রতীক দেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে গাংনী আসন উপহার দিয়েছেন।
গত ১০ এপ্রিল উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে শতভাগ কাউন্সিলরদের সমর্থনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। মাদকাসক্ত, সুযোগ সন্ধানীরা দূর্নীতি করার সুযোগ না পাওয়াতে তার নামে অপপ্রচার করছেন।
তিনি আরও বলেন- সংবাদ সম্মেলন করা লিখনের দাদা সামসুল হক স্বাধীনতা বিরোধী মুসলিম লীগের লোক ছিলেন। নিকটাত্বীয়রা জামাতের রাজনীতির সাথে জড়িত। ইসমাইল হোসেন কয়েকবার মাদকসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।
গত উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন মটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে. মজিরুল ইসলাম কাপপিরিচ প্রতীক এবং ইসমাইল হোসেন আনারস প্রতীক নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হলে দলের কোন পদে থাকতে পারবেনা। সেই হিসেবে সংবাদ সম্মেলন করা ওরা আওয়ামী লীগ কিম্বা অঙ্গসংগঠনের কোন সদস্য না।