মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী আসাদুল ইসলাম লিটনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মরর্ত থেকে মাতৃ স্বাস্থ্য ভাউছার স্কীম (ডিএসএফ) এর প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা হলে বিভিন্ন অদৃশ্য কারণে সে পার পেয়ে যায়।
তথ্য প্রমানাদি এবং তার লিখিত অনিয়মের স্বীকারোক্তি থাকলেও সংশিষ্ট দুর্নীতি দমন কমিশন কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় আসাদুল ইসলাম লিটন আজও রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তার দুর্নীতির কাছে গাংনী উপজেলা কমপেক্স প্রায় সকল কর্মচারীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। তার ভয়ে কমপেক্সের নার্সরা রোগিদের সেবা দেওয়া বন্ধ করে তার অফিসে বসে খোশ গল্পে মেতে থাকে।
একটি সূত্রে জানায়, আসাদুল ইসলাম (লিটন) রাজি খুশি হলে সব ঠিক হয়ে যাবে, জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, কে এই লিটন? এর খুটির জোর কোথায়। তার পরেও সে আবারো গাংনী স্বাস্থ্য কমপেক্সের বাবুচি প্রয়াত ক জেম উদ্দীনের পেনশনের টাকা তুলতে গেলে তার পরিবারে কাছে থেকে পেনশনের অর্ধেক টাকা দাবী করে আসাদুল ইসলাম লিটন।
দাবী কৃত টাকা দিতে অস্বীকার করায় তার ফাইল আটকে রাখে প্রায় ৩ মাস ধরে সে মিথ্যা ভাবে হয়রানি করছে বলে তার পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন।
অভিযুক্তরা হলেন সাবেক আরএমও ডা. আনোয়ারুল ইসলাম, হিসাব রক্ষক আসাদুল ইসলাম লিটন, ষ্টোর কিপার, দবির উদ্দীন, ডিএসএফ’র কো অর্ডিনেটর সেলিনা আক্তার ও পরিসংখ্যান বিদ মনিরুল ইসলাম। গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে বেতন হওয়া শর্তে নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মরত কর্মচারী দীর্ঘ দিন ধরে বেতন পাই না।
পরে বেতনের সময় জনপ্রতি ৪হাজার করে টাকা ঘুষ দিতে হয় আসাদুল ইসলাম (লিটন) কে। গাংনী পৌরসভার বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের দিনমুজুর আলম হোসেনের কাছে থেকে সরকারী কাজ করিবার জন্য টাকা নেওয়া হয়। নতুন ভবনের নির্মাণ ৩০র্পাসেন্ট কাজ বাকী থাকলেও ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কাজ
বুঝে নিয়েছেন সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ও অফিস সহকারি আসাদুল ইমসলাম লিটন। সরকারি নিয়ম আছে সেবা উন্নয়ন
কমিটির মাধ্যমে কাজ টি বুঝে নিতে হবে।
নতুন ভবনের সীমানা বাউন্ডারীর উপরে এ্যাংগেল দিয়ে ঘেরার কথা থাকলেও সেখানে ঘেরা হয়নি। নির্মাণধীন নতুন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর নতুন আসবাবপত্র দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে পুরাতন আসবাবপত্র দিয়ে কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। গত জুন মাসে সরকারি ভাবে ভেষজ ঔষাধ ক্রয় বাবদ ৩ লক্ষ টাকা ও ভেষজ বাগান করিবার জন্য ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ আসে সেখানে ভেষজ ডাক্তার শাহিন আলী, লিটন ও সে সময় দায়িত্ব থাকালীন টিএইচও ৩ জনে মিলে ভুয়া কমিটির মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেন।
ভবনের ভিতরে বিদ্যুৎ কাজ করা হয়নি। প্লষ্টিক দ্রবাদি ফেলা ট্যাংকিও নিমার্ণ করা হয়নি। ময়লা ফেলার ট্যাংকি নির্মাণ করা হয় নি। এছাড়াও গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রায় তিন বছর যাবত
জেনারেটর সেবা বন্ধ রয়েছে । উপজেলা প.প. কর্মকতা ও প্রধান অফিস সহকারি মিলে অর্থ বছরের জেনারেটের সেবা দেখিয়ে ৪০ হাজার টাকার ভুয়া বিল করে টাকা তুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ২৯/০৭/১২ ইং তারিখে ০৫.৬৬৮.০১৮.১৮.০০.০০.৩০-২০১২-৫৩১ (৫) নং স্বারকে (মাতৃভাতা স্কিম) ডিএসএফ’র টাকা লুটপাট ও অনিয়মের অভিযোগে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ডিমান্ড সাইড ফাইনান্সিং (ডিএসএফ) ব্যাপক অনিয়ম খুঁজে পায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে পেশকৃত তদন্ত রির্পোট থেকে জানা গেছে, গত ২০১১/১২ অর্থবছরেই সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গোটা উপজেলাতে দরিদ্র গর্ভবতী মায়েদের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৫০ জন। কিন্তু বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ২৪২টি কার্ড। বাড়তি ৫৯২টি কার্ড ভুয়া গর্ভবতীদের নামে বিতরণ দেখিয়ে প্রায় ১৮লক্ষ টাকা আত্মসাত করেন। অনিয়মের বিষয় টি ২৮/০৭/১২ ইং তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত ভাবে জানিয়েছেন অভিযুক্ত কয়েক জন।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তৎকালিন সময়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. হাসান আলী অনিয়ম রুখতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এছাড়া আরো উল্লেখ করা হয়েছে হিসাব রক্ষক আসাদুল ইসলাম লিটন ডিএসএফ’র দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা না হয়েও অজ্ঞাত কারনে দূর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছেন।
অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ও দূর্নীতি দমন কমিশন কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপ পরিচালক আব্দুল গাফফার জানান, ডিএসএফ’র ৬০ লক্ষ টাকা দূর্নীতির অভিযোগে ৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। শুধু ৫ জনই না তদন্তকালে যদি দূর্নীতির সাথে অন্যদের জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়া দূর্নীতি দমন কমিশন কুষ্টিয়া কার্যালয়ের ২৯/১০/১৪ ইং তারিখের ১১৭১ নং স্বারকে ২০১০/১১ ও ২০১১/১২ সালের সকল তথ্য চেয়ে আবাসিক মেডিকেল অফিসার বরাবর চিঠি দেয়া হয়। এব্যাপরে অভিযুক্তরা এ বিষয়ে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর প্রধান অফিস সহকারী আসাদুল ইসলাম লিটন সাথে যোগাযোগ করিলে তার বিরুদ্ধে সংবাদ না লেখা জন্য বার বার অনুরোধ করে। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর প:প:কর্মকর্তা ডা: রিয়াজুল আলম বলেন, আমার কাছে অভিযোগ দিলে আমি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করবো।