শিশুদের আদর করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। একটি শিশুর জন্মের পর থেকে তার মা-বাবাসহ তার পরিমণ্ডলের সবাই স্নেহের স্পর্শে রাখে। তারা সবাই স্নেহের চাদরে শিশুটিকে আগলে আগলে বড় করে তুলতে চায়।
তবে একথাও সত্য যে স্পর্শ কখনো কখনো শুধুই স্পর্শ নয়। অনেক সময় সেই স্পর্শেও থাকে বিকৃতি কিংবা দুরভিসন্ধি। তাই তো শিশুদের ছোটবেলা থেকেই কোন স্পর্শ ভালো কোন স্পর্শ খারাপ (গুড টাচ-ব্যাড টাচ) তা বোঝা জরুরি।
হবু মায়ের পোশাকহবু মায়ের পোশাক
প্রতিটা কোমলমতি শিশুর অধিকার নিরাপদে হেসে-খেলে বেড়ে ওঠা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি, যৌন নির্যাতন কিংবা যৌন হয়রানির মত ঘটনার শিকার অনেক শিশুর ক্ষেত্রে হয়। আর এটি যে কেবল কন্যা-শিশুর ক্ষেত্রে ঘটতে পারে, তা কিন্তু নয়। ছেলে শিশুটিও নিরাপদ নয় এমন বিকৃত অভিজ্ঞতা থেকে।
ভয় এবং শঙ্কার বিষয় হচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুরা এ ধরনের হয়রানির শিকার হন ‘কাছের মানুষ’ বা পরিচিত কারও দ্বারা। অথচ শিশুরা বিষয়টি বুঝতেও পারে না যে তাদের সঙ্গে কী ঘটছে। আর সে যখন বুঝতে শেখে তখন এ ধরনের ঘটনা তার উপর অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করে। তাই শিশুকে অবশ্যই গুড টাচ ও ব্যাড টাচের পার্থক্য শেখাতে হবে। এ সম্পর্কে ধারণা থাকলেই শিশু নিজে থেকে সতর্ক হতে পারবে।
শিশুদের গুড টাচ ব্যাড টাচ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অফিসার নাসরিন জাহান।
তিনি বলেন, শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন বর্তমান সমাজে যেন ব্যাধির আকার নিয়েছে। প্রায়ই শিরোনামে চলে আসে এ ধরনের ঘটনা। শুধুমাত্র কন্যা সন্তান নয়। পুত্রসন্তানও হতে পারে নির্যাতনের শিকার। অবশ্যই মানসিকতার বদল প্রয়োজন। একই সঙ্গে শিশুকেও প্রথম থেকেই শিক্ষিত করে তোলা প্রয়োজন। আর এই দায়িত্ব প্রাথমিক ভাবে মা হিসেবে আপনাকেই নিতে হবে। ছোট থেকেই গুড টাচ-ব্যাড টাচের পার্থক্য শিশুকে বুঝিয়ে দিন। শিক্ষাটা শুরু হোক বাড়ি থেকেই।
শিশুর আস্থা তৈরি করুন
সবার আগে শিশুর আস্থা অর্জন করুন। আপনি হয়ে উঠুন তার ভরসার জায়গা। যাতে সে যেকোনো ভালোলাগা বা মন্দলাগার কথা আপনার কাছে নির্ভয়ে বলতে পারে। শিশুকে বোঝান, তার বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করুন। তাকে গুড টাচ বা ব্যাড টাচ বোঝানোর আগে তার আস্থা অর্জন করা জরুরি।
ব্যাড টাচ সহজভাবে বোঝান
শিশুরা সরল। তারা গম্ভীর আলোচনা বুঝতে পারে না। তাই শিশুকে ব্যাড টাচ সম্পর্কে বলতে গিয়ে গম্ভীরভাবে আলোচনা করার দরকার নেই। তাহলে সে ভয় পেয়ে যেতে পারে। এটি নিয়ে আলাদা আলোচনায় বসারও দরকার নেই। প্রতিদিনের ছোট ছোট আলাপের মাঝেই বুঝিয়ে বলতে পারেন।
শরীরের সব অঙ্গ পরিচিত করুন
শিশুকে অবশ্যই তার প্রাইভেট পার্ট সম্পর্কে সচেতন করা প্রয়োজন। অভিভাবক হিসেবে কাজটি করতে হবে আপনাকে। তার প্রাইভেট পার্টে স্পর্শ করে কখনো আদর করবেন না। তাকে যে কেউ প্রাইভেট পার্টে হাত দিতে পারবে না শিশুর বয়স পাঁচ বছর হলে সেকথাও বুঝিয়ে বলুন।
অনুমতি নিন
সে শিশু হলেও তার থেকে অনুমতি নেওয়ার অভ্যাস করুন। এতে সে অনুমতির গুরুত্ব শিখবে। গোসল কিংবা পোশাক পরিবর্তন করানোর সময় অবশ্যই তাকে স্পর্শ করার আগে অবশ্যই তার অনুমতি নিন। এতে সে অনুমতি ছাড়া যে প্রাইভেট পার্টে হাত দেওয়া যায় না এটি বুঝতে শিখবে।
চিৎকার করতে শেখান
যেকোনো নেতিবাচক বা খারাপ আচরণ পেলে তাকে চিৎকার করতে শেখান। কারও স্পর্শ ভালো না লাগলে যেন সে সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার শুরু করে। হতে পারে তা যে কারও স্পর্শ। যেকোনো পরিস্থিতিতে তাকে নিজেকে রক্ষা করার বুদ্ধি শেখাতে হবে। তবে খেয়াল রাখবেন, এসব শেখাতে গিয়ে যেন শিশুর মনের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
সূত্র: ইত্তেফাক