আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ২০০৭ সালে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে। আইওএএ -এর লক্ষ্য সারা বিশ্বের তরুণ শিক্ষার্থীদের জ্যোতির্বিদ্যা এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আগ্রহী করে তোলা। বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু ২০১৮ থেকে। সে বছর আইওএএ-এর অনুমতিক্রমে জাতীয় অলিম্পিয়াড কর্তৃপক্ষ হিসাবে বাংলাদেশ দল নির্বাচনের স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ অলিম্পিয়াড অন অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স কমিটি (বিডিওএএসি)।
এবার ছিল আইওএএ-এর ১৪তম আসর। কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটাতে এটি অনুষ্ঠিত হয়। আট দিনব্যাপী (১৪-১৯ নভেম্বর) চলা এ আয়োজনে বিশ্বের ৫৩টি দেশ থেকে বাছাইকৃত প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ থেকেও অংশ নেয় পাঁচ শিক্ষার্থী। রাজধানীর নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী তূর্য রায় ও ইমদাদুল্লাহ রাজি, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সৈয়দ শাফাত মাহমুদ, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের আদনান বিন আলমগীর এবং সিলেটের মুরারি চাঁদ কলেজের শিক্ষার্থী জাকিয়া তাজনুর চৌধুরী। এর মধ্যে আদনান বিন আলমগীর গড়েন এক অনন্য কীর্তি। সবাইকে চমকে দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষার্থী হিসাবে জ্যোতির্বিজ্ঞানে ব্রোঞ্জপদক জয় করেন। এ ছাড়া দলের বাকি সদস্যরা সম্মানসূচক পুরস্কার লাভ করেন। নিজের অর্জন, অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে একরাশ উচ্ছ্বাস দেখা গেল আদনানের চোখে মুখে। তার মতে, ব্যক্তিগত কোনো পাওয়া নয়, এ অর্জন দেশ ও দশের। সেই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, এটি ছিল সত্যিই জীবনের মোড় ঘুরানো এক অভিজ্ঞতা। এ সময়ের অনুভূতি রূপকথার গল্প থেকে কোনো অংশে কম নয়।
বাংলাদেশ জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে তিনটি ধাপে সূক্ষ্ম মাপকাঠিতে প্রতিযোগীদের বিচার করা হয়।
এবার বছরের শুরুর দিকে ৪র্থ বাংলাদেশ জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের স্থানীয় কার্যক্রম শুরু হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানভিত্তিক এ আয়োজনে প্রথম রাউন্ডে অংশগ্রহণ করে ৪০০-এর অধিক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। সেখান থেকে ১২০ জন চূড়ান্ত প্রতিযোগী নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল রাউন্ড। এরপর ৩৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে গত জুনে শুরু হয় ক্যাম্প। যেখানে বিডিওএএ-এর অভিজ্ঞ এস্ট্রোনমি ট্রেইনারদের সহযোগিতায় শুরু হয় প্রবলেম সলভিং এবং অনুশীলনের পালা; জ্যোতির্বিজ্ঞানের হাতেখড়ি থেকে কীভাবে স্কুল-কলজের জ্ঞান দিয়ে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন ঘটনার ব্যাখ্যা করতে হয় তা শেখানো হয় শিক্ষার্থীদের। ন্যাশনাল ক্যাম্পের দেড় মাসের ক্লাসের পর চূড়ান্ত ১৫ জন সুযোগ পায় এক্সটেন্ডেড ক্যাম্পে অংশগ্রহণের। দুই মাস এ ক্যাম্পে তারা শিখে জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের সব উচ্চতর বিষয়। সেপ্টেম্বরে শেষ পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করা হয় পাঁচ প্রতিযোগীকে, যারা ১৪তম আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পায়। উল্লেখ্য, কোভিড বিবেচনায় প্রায় পুরো আয়োজনই এবার অনলাইনে সম্পন্ন হয় এবং সর্বশেষ পর্যায়ে প্রতিযোগীরা আইইউবির (ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ) কম্পিউটার ল্যাব থেকে অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
এবারের আসরে বাংলাদেশ দলের টিম লিডার হিসাবে ছিলেন সাবেক আইওএএ প্রতিযোগী ও ফাহিম রাজিত হোসেন ও মোঃ মাহমুদুন্নবী। ২০১৮ থেকে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা। অন্যদের মধ্যে পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে অর্ণব চৌধুরী এবং সুপারভাইজার হিসাবে নূর মোহাম্মদ ইমরান ও হাসনাত মোহাম্মদ নাঈম সংশ্লিষ্ট ছিলেন।