ঈদুল আজহায় নামাজ শেষে দিনব্যাপী কোরবানির পশু নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন কোরবানীদাতারা। এ সময় গরু-ছাগলের চামড়া ছাড়ানো, মাংস ও হাড় কাটতে অনেকটা সময় পার হয়ে যায়।
এতে পরিবারের সদস্যের পাশাপাশি যদি কসাই থাকে তবে পশু কোরবানির সব কাজই খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়।
মেহেরপুর জেলার গাংনী, মুজিবনগর ও সদর উপজেলার প্রতিটি পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে প্রায় প্রতিটি বাড়ির সদস্যরা পশু কোরবানিতে ব্যস্ত রয়েছেন। কিন্তু চাহিদার তুলনায় কসাই না থাকায় ভিন্ন পেশার অনেক মানুষ মৌসুমী কসাই হয়ে পশু কোরবানি করেছেন। এজন্য জেলা শহরের বাইরে থেকেও অনেকে মৌসুমী কসাই হিসেবে কাজ করতে এসেছেন। তারা পারিশ্রমিকের বিনিময় ‘একদিনের কসাই’ হিসেবে কাজ শেষে আবার চলে যান। পশু ভেদে একটি ছাগলের জন্য মজুরী নিচ্ছেন ৫-৭শ’ টাকা।
বাওট গ্রামের সিরাজুল ইসলাম একজন কাপড় ব্যবসায়ী। গরু-ছাগল কোরবানির পর চামড়া ছাড়ানো থেকে মাংস কাটার কাজে যুক্ত হয়েছেন। কোরবানির ঈদে তিনি ‘একদিনের কসাই ‘ হয়ে যান।
সিরাজুল বলেন, আগেও এই কাজ করেছি। প্রতি কোরবানির সময় তার গরু-ছাগলের মাংস কাটার কাজ করে থাকি। পরে মজুরি ও কোরবানির মাংস নিয়ে বিকেলে বাড়ি চলে যাই।
তিনি বলেন, আমি জাত কসাই না, তবে কোরবানির ঈদে সব সময় এই কাজটি করি। এতে কিছু টাকা উপার্জনও হয়। তার সঙ্গে হাফিজুল, হামিদুল ও রাসেল নামে তিনজন সহযোগীও আছেন।
জোড়াপুকুর গ্রামের রাইহান আলী ও সমসের আলী পেশায় রাজমিস্ত্রিী। কোরবারীর ঈদে কসাইয়ের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। তারা দুজন ঈদের দিনে মৌসুমী কসাই হিসেবে কাজ করে থাকেন। এতে তারা এক/দুই হাজার টাকার আয়ের পাশাপাশি দেড় দুই কেজি কোরবানির গোস্তও পাবেন।
জোড়পুকুরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা কোরবানির গরুর মাংস বানানোর কাজ করেছেন।
শিশিরপাড়া গ্রামের সেতাব আলী কোরবানি ঈদে বনে যান মৌসুমী কসাই। প্রতি বছরের মত এবারও একদিনের কসাই হিসেবে কাজ করছেন।
সেতাব আলী বলেন, কোরবানির পর গরুর মাংস বানানো ও হাড় কোপানো একটি ঝামেলার কাজ। নিজেরা এই কাজ করতে গেলে দিন পার হয়ে যায়। এছাড়াও হাড় কোপানোর কাজ সবার জানা নেই। তাই কসাই হিসেবে লোকজনকে নেন কোরবানীর মালিকরা।
আমরা দু’জনে মৌসুমী কসাই হিসেবে কাজ করেছি। দুপুরের মধ্যে সব মাংস তৈরী করতে পেরেছি। আমরা মূলত কসাই না, তবে কাটাকাটির বেশ কিছু নিয়ম জানি।
ছাতিয়ানের রমতুল্লাহ, আজগর আলী বলেন, দু’টি গরু বানানোর কাজের চুক্তি করেছি। আমার সঙ্গে তিনজন সহযোগী রয়েছে।
তারা বলেন, সকালে ২টি গরু বানানোর পর মালিক ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। দুপুরের মধ্যে দু’টি গরু বানানো শেষ হয়ে যায়।
তিনি মৌসুমি কসাই হলেও পেশাদার এক কসাইয়ের মাধ্যমে গরু কাটার কাজ পেয়েছিলেন।
এছাড়া এবারের ঈদে দেখা গেছে বেশির ভাগই মৌসুমী কসাই। তারা কেউ ভাড়াটিয়া, কেউ অন্য পেশার লোক।
ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু জবাইয়ের পর মাংস বানানোর কাজে রিকশা-ভ্যানচালক, হকার, রাজমিস্ত্রী, গাড়িচালক, দারোয়ানসহ ভিন্ন পেশার অনেক মানুষ মৌসুমী কসাইয়ের কাজ করেছেন।
ঈদের দিন সকালে বিভিন্ন এলাকা থেকে নিম্ন আয়ের মানুষরা মৌসুমী কসাই হয়ে গাংনী উপজেলা শহরে আসেন।