কক্সবাজারে চকরিয়া উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম সাজ্জাদ হোসেন (৩৮)।
পুলিশের দাবি, নিহত সাজ্জাদ চলন্ত গাড়িতে চম্পা বেগমকে (১৯) নিপীড়নের পর ফেলে দিয়ে হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলার প্রধান সন্দেহভাজন আসামি।
তার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও নারী নির্যাতন, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, চুরি, ইয়াবা কারবারসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সাজ্জাদ পেকুয়া সদরের শেখের কিল্লাঘোনার এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে।
সোমবার দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে চকরিয়া-পেকুয়া-বাঁশখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের চকরিয়ার কোনাখালী মরংঘোনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) একেএম সফিকুল আলম চৌধুরী যুগান্তরকে জানান, সোমবার দুপুরে পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের শেখের কিল্লাঘোনার এলাকা থেকে স্থানীয়রা চম্পা হত্যা মামলার সন্দেহভাজন প্রধান আসামি সাজ্জাদ হোসেনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
সাজ্জাদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তরুণী চম্পা বেগমকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে নিপীড়ন ও পরে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে।
সোমবার দিনগত রাত ৩টার দিকে পুলিশ তাকে নিয়ে সেই অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে গেলে সাজ্জাদের সহযোগী পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। প্রায় ২০ মিনিট ধরে উভয়পক্ষে গুলিবিনিময়ের একপর্যায়ে পিছু হটে সাজ্জাদের অস্ত্রধারী সহযোগীরা।
পরে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ সাজ্জাদকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাস্থল থেকে দেশে তৈরি দুটি এলজি, বেশ কয়েক রাউন্ড তাজা গুলি ও ব্যবহৃত গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।
এ সময় অস্ত্রধারীদের ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ আবুল ফারুক, দুই কনস্টেবল সুবল ও সুমনসহ তিন পুলিশ সদস্য। তাদেরও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
পরিদর্শক (তদন্ত) একেএম সফিকুল আলম চৌধুরী আরও জানান, বন্দুকযুদ্ধে নিহত সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও নারী নির্যাতন, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, চুরি, ইয়াবা কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধের দায়ে মামলা রয়েছে পেকুয়া থানায়।
চম্পা বেগমকে নিপীড়নের পর হত্যার পর দিনই র্যাব অপর সন্দেহভাজন আসামি সাজ্জাদের সহযোগী অটোরিকশাচালক জয়নাল আবেদীনকে (২২) আটক করে। জয়নাল পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা নন্দীপাড়ার মোহাম্মদ আলী প্রকাশ সোনইয়ার ছেলে।
র্যাবের হাতে আটকের পর জয়নালের স্বীকারোক্তি মতে পুলিশ সাজ্জাদ হোসেনকে আটকের জন্য কয়েকবার তার বাড়িতে গিয়েও তাকে ধরতে পারেনি। এ ঘটানায় সাজ্জাদ জড়িত থাকার বিষয়টি স্থানীয়রা জানতে পেরে সোমবার দুপুরে তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, নিহত সাজ্জাদের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা, অস্ত্র ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলা রুজু করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের খরুলিয়ার তরুণী চম্পা বেগম গত ৬ মে চট্টগ্রাম থেকে চকরিয়া-পেকুয়া-বাঁশখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে কক্সবাজার যাওয়ার সময় পেকুয়ায় এসে গাড়ি বদল করে।
চম্পা পেকুয়া থেকে সিএনজিচালিত বেবি টেক্সিতে চকরিয়ার দিকে যাওয়ার সময় কোনাখালীর মরংঘোনার একটি ব্রিজের কাছে তাকে দুই অটোচালক নিপীড়ন করে।
এর পর চম্পাকে তারা পরিকল্পিতভাবে একটি অটোরিকশা থেকে ফেলে দিয়ে অপর অটোরিকশা দিয়ে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই চম্পার মৃত্যু হয়। সুত্র-যুগান্তর