কুষ্টিয়ায় একই চাল বিভিন্ন ব্রান্ডের নামে বস্তাজাত করে বিক্রয় ও প্রতি বস্তায় ওজনে কম দেওয়ার অপরাধে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দেশব্যাপী চালের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে এ বিশেষ অভিযান চালানো হয়।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুষ্টিয়ার খাজানগর এলাকায় বাজার তদারকিমূলক অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়।
এসময় ২৫ কেজির প্রতি বস্তা চালে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত কম দেওয়া, চাল বিক্রির সময় কোন ভাউচার প্রদান না করা এবং একই চাল বিভিন্ন ব্রান্ডের নামে বস্তাজাত করে বিক্রয় কার অপরাধে দুইটি মিল মালিককে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয় অভিয়ান পরিচালনা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুচন্দন মন্ডল।
তিনি জানান, চালের মূল্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কুষ্টিয়ার খাজানগর এলাকার বিভিন্ন মিলে বাজার তদারকিমূলক অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় হালিম অটো রাইস মিলে গিয়ে দেখা যায় তারা ২৫ কেজির প্রতি বস্তা চালে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত কম দিচ্ছে। তারা চাল বিক্রির সময় কোন ভাউচার প্রদান করে না। একই চাল বিভিন্ন ব্রান্ডের নামে বস্তাজাত করে বিক্রয় করছে। বিভিন্ন অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়। পাশাপাশি মোজাম্মেল এন্টারপ্রাইজ এর মালিক আসমা এন্টারপ্রাইজের নামে চালের পাইকারি ব্যবসা করেন। তিনি কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই কাজললতা চালের দাম প্রতি কেজিতে দশ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন। আসমা এন্টারপ্রাইজ কে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ অনুযায়ী ওই দুই প্রতিষ্ঠান মালিকের কাছ থেকে মোট এক লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। যাতে আড়তদার ও মিলাররা চালের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না পারে এজন্য এ বিশেষ অভিযান চালানো হয়। এ অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।
তদারকিতে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী, সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তরফদার, েজলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার সজিব পাল ও জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর (ভারপ্রাপ্ত) জনাব সুলতানা রেবেকা নাসরীন।
এদিকে, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বাজারে মূল্য বেশি হওয়ায় কুষ্টিয়ায় চাল সংগ্রহ অভিযানে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। জেলায় প্রতিবছর চাল সংগ্রহ অভিযান শতভাগ সফল হলেও এবছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় এবং সরেজমিনে জেলার দুটি খাদ্যগুদামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের মে মাস থেকে কুষ্টিয়াসহ সারাদেশে মিল মালিকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে একযোগে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। এবছর কুষ্টিয়া জেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪২ হাজার ৬৭৪ মেট্রিক টন। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায়ই চাল সংগ্রহের টার্গেট নির্ধারণ করা হয় ৩৭ হাজার ৪৯৪ টন।
খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে এবছর চাল সংগ্রহ অভিযানের জন্য জেলার ৪৬৯ মিল মালিকের সঙ্গে লিখিত চুক্তি করা হয়। প্রতি কেজি চালের সরকারি দর নির্ধারণ করা হয় ৪০ টাকা। কিন্তু চাল সংগ্রহ অভিযানের শুরুতেই সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে চালের বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় সংগ্রহ অভিযানে ধীর গতি দেখা দেয়। খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দফায় দফায় তাগাদা দেওয়ার পরও মিলারদের মধ্যে চাল সরবরাহে অনীহা দেখা যায়। চলতি বছরের ৩১ আগস্ট চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর থেকেই সংগ্রহ অভিযানে স্থবিরতা নেমে এসেছে। দফায় দফায় তাগাদা দেওয়া স্বত্বেও মিলাররা কোনোভাবেই চাল সরবরাহ করছেন না। ৪৬৯ জন মিল মালিকের মধ্যে ২৫টি হাসকিং মিল মালিক একেবারেই চাল সরবরাহ করেননি বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ অটোমেজর অ্যান্ড হাসকিংমিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন বলেন, মিলগেটে বর্তমানে স্বর্ণা মোটা চাল ৫০ থেকে ৫১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে এই চাল ৫২ থেকে ৫৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে বর্তমানে ধানের দামও বেশ চড়া। বাজারে মোটা ধান ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে গুদামে চাল দিলে লোকসান হবে দেখে মিলাররা চাল সরবরাহ করতে চাচ্ছে না।