চুয়াডাঙ্গা সদর গড়াইটুপি ইউনিয়নের চালের ডিলার হায়দার মল্লিকের বিরুদ্ধে ওএমএসের চাল চুরির অভিযোগ উঠেছে।
কার্ডধারীরা অভিযোগ করে বলেন, ডিলার হায়দার মল্লিক ধীর্ঘদিন থেকে এভাবে চাল কম দিয়ে আসলেও অভিযোগ করে কোন প্রতিকার পায়নি।
অভিযোগের ভিত্তিত্বে উপজেলা প্রশাসরে পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে বলে জানাগেছে।
অভিযোগে জানাগেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের ১০ কেজি দরের চাল বিক্রির ডিলারশীপ পায় আ.লীগ নেতা হায়দার মল্লিক। তিনি গত ৯ এপ্রিল ৬০৩ জন কার্ড ধারীর বিপরীতে ৬০৩ বস্তা চাল তুলে আনেন সরোজগঞ্জ সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে। গত রোববার সকাল ৯টার দিকে ওই চাল তিনি গড়াইটুপি বাজারের গোডাউন থেকে কার্ডধারীদের মধ্যে বিক্রি শুরু করেন।
ইউনিয়নের খাসপাড়া ও গবরগাড়া গ্রামের কয়েকজন কার্ডধারী তারা তাদের চাল কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় তারা তাদের চাল বাজারের একটি দোকানে গিয়ে মাপযোগ করেন। মাপযোগ কালে দেখতে পান বস্তাপতি (৩০ কেজি) ২ থেকে দেড় কেজি করে চাল কম রয়েছে।
বিষয়টি উপস্থিত থাকা ইউপি সদস্য জাকির হোসেনকে বলেন। জাকির হোসেন তাৎক্ষনিক ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেনকে অবগত করেন। চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে পৌছান এবং বস্তা পুনরায় মাপযোগ করে তার সত্যতা পায়। চেয়ারম্যান বিষয়টি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করেন।
খবর পেয়ে কিছু খনের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌছান চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা এসিল্যাণ্ড ইসরাত জাহান। এসময় উৎসুক জনতা ভিড় জমায়। তিনিও বস্তায় চাল কম থাকার বিষয়টি ডিলারের নিকট জানতে চান।
এসময় ডিলার হায়দার মল্লিক জানান, সরোজগঞ্জ সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে যে ভাবে দিয়েছে তিনি সে ভাবেই নিয়ে এসে কার্ডধারীদেকে দিচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর ডিলার, চেয়ারম্যান, মেম্বর, এসিল্যাণ্ড সকলেই সরোজগঞ্জ সরকারি খাদ্যগুদামে যান এবং সেখানকার বস্তার চাল ওজন করেন। গুদামের বস্তার চাল মপযোগ সঠিক পান। তখন বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে ডিলার হায়দার মল্লিক প্রথম থেকেই এভাবে চাল কম দিয়ে আসলেও কোন অভিযোগেই কর্ণপাত করেননি।
ইউপি সদস্য জাকির হোসেন বলেন, কার্ডধারীরা আমার কাছে বললে আমি চাল মাপতে বলি এবং প্রায় বস্তায় ২ থেকে দেড় কেজি করে চাল কম পাওয়া যায়। এভাবে ৬০৩ বস্তা চাল মাপযোগ করলে তো অনেক চাল কম হবে। পরে ৬০টি বস্তার চাল মাপযোগ করা হয়। সেখানেও ৫০ থেকে ৫২টি বস্তায় একই ভাবে চাল কম পাওয়া যায়। হুক মেরে পড়ে গেলে একআধটা বস্তার চাল কম হতে পারে তাইবলে এত বস্তার চাল কম মেনে নেওয়া যায় না।
এ ব্যাপারে ডিলার হায়দার মল্লিক বলেন, আমাকে যে ভাবে গুদাম থেকে দিয়েছে আমি সেই ভাবেই কার্ডধারীকে দিয়েছি। আমি কোন চাল চুরি করিনি।
সরোজগঞ্জ সরকারি খাদ্যগুদামের দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোল্লা আহম্মেদ জামান বলেন, কোন ডিলার যখন চাউল নেয় তখন সে তার মত করে বুঝ করে নিয়ে যায়। গোডাউন থেকে বাহিরে গেলে সেখানে কিছু ঘটলে এর দায়ভার আমাদের ওপর বর্তায় না। তার পরও ডিলারকে যে লট থেকে চাল দেয়া হয়েছে সে লটের চাল এখানে মেপে সঠিক পেয়েছে তদন্তে আসা অফিসার।
ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বলেন, এক আধশো গ্রাম কম হলে সেটি নিয়ে কেউ অভিযোগ করে না। যারা চাল কম পেয়েছে তারা সকলেই লিখিত ভাবে তদন্তে আসা অফিসারের নিকট দিয়েছে।
প্রথমিক তদন্তকারি অফিসার এসিল্যাণ্ড ইসরাত জাহান বলেন, সরেজমিনে এসেছি যা পেলাম তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাবো। সিদ্ধান্ত কি হবে সেটা উপর মহল দেখবেন।
এব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান বলেন, যেহেতু এটি হতদরিদ্র মানুষের চাল প্রথমেই কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে গরিব মানুষগুলো যাতে তাদের চালটি এখনই পায় সে ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ডিলারকে ৩০ কেজি করে বুঝ করে বিতরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সেই সাথে সদর উপজেলা পানিসম্পদ কর্মকর্তাকে প্রধান করে যুবউন্নয়ন কর্মকর্তা ও ফ্যামিলিপ্লানিং কর্মকর্তার সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে অভিযুক্তর বিরুদ্ধে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।