খুলনা, টাঙ্গাইল ও চট্রগামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের ওপর হামলা নির্যাতনের প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন প্রতিবাদ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শহরের শহীদ হাসান চত্বরে ঘন্টাব্যপি এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় সাংবাদিকরা সড়কের ওপর বসে ক্যামেরা, লাপটপ ও বুম রেখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে অভিনব প্রতিবাদ জানান।
কর্মসূচি চলাকালে মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদাহ, যশোর ও খুলনার সাথে চুয়াডাঙ্গার সড়ক পথে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সাংবাদিক নেতারা বলেন, দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি চালু থাকায় বন্ধ হচ্ছে না সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার মত ঘটনাগুলো। আর তাই এখন প্রতিবাদ নয়, গড়তে হবে প্রতিরোধ। সাংবাদিকদের এ কর্মসূচিতে জেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দও অংশগ্রহন করে সংহতি প্রকাশ করেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রেসক্লাবের আয়োজনে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শহরের শহীদ হাসান চত্বরে সমাবেত হয় জেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মিরা। পরে বেলা ১১টায় মানববন্ধনে অংশ নেয় জেলার চারটি উপজেলার সাংবাদিকরা।
আরো পড়ুন:চুয়াডাঙ্গায় ছয়দিনব্যাপি অরিন্দম সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু
জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ্যাড. মানিক আকবরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সিনিয়র সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন, শাহার আলী, নাসির উদ্দীন আহমেদ, জেড আলম, শরীফ উদ্দীন হাসু, জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, দর্শনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আওয়াল হোসেন, জীবননগরের জামাল হোসেন ও হিজলগাড়ি প্রেসক্লাবের শামীম হোসেন মিজি।
এ সময় সাংবাদিকরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশে সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটছে, অথচ এসব ঘটনার কোন কূল কিনারা হচ্ছে না। যার কারণে প্রতি বছর দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের মত ঘটনা ঘটছে অহরহ। সম্প্রতি খুলনা, টাঙ্গাইল ও চট্রগ্রামে সাংবাদিকদের ওপর হামলার চিত্র তুলে ধরে সাংবাদিক নেতারা বলেন, কোন সভ্র সমাজে এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায়না। আর তাই এখণ প্রতিবাদ নয় আমরা প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত।
সাংবাদিকদের এ মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে অংশগ্রহন করেন, চুয়াডাঙ্গা সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও সুজনের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, পৌর ডিগ্রিী কলেজের অধ্যক্ষ শাহাজান আলী, সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ও নদীরক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সি, উদীচীর সভাপতি হাবীবী জহির রায়হান, কবি সাহিত্যিক হেলাল হোসেন জোয়ার্দ্দার ও এনজিও প্রতিনিধি ইলিয়াস হোসেন।
তারা বলেন, রাষ্ট্রের চতুর্থস্তম্ভ বলা হয় গণমাধ্যমকর্মিদের। অথচ আমাদের দেশে এ পেশা এখন ঝুঁকিপূর্ণ। এতে করে মুক্ত সাংবাদিকতা চরমভাবে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। যা গণতন্ত্রের জন্যও হুমকি। তারা সাংবাদিকদের নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
মানববন্ধন শেষে সাংবাদিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করেন। এ সময় তারা সড়কের ওপর বসে ক্যামেরা, লাপটপ ও বুম রেখে সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে অভিনব প্রতিবাদ জানান।
কর্মসূচি চলাকালে মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদাহ, যশোর ও খুলনার সাথে চুয়াডাঙ্গার সড়ক পথে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রশাসনের অনুরোধে অবরোধ তুলে নেন সাংবাদিক নেতারা।
প্রায় আধাঘন্টা সড়ক অবরোধ শেষে সাংবাদিকরা বিক্ষোভ মিছিল সহকারে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজির হয়। পরে সাংবাদিকরা চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ৫ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রী বরাবর জমা দেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম ডালিম জানান, ৫ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে
১. দেশব্যাপি সাংবাদিক নির্যাতন, হয়রানি ও মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে হবে।
২. রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদকর্মিদের সে হিসাবে মর্যাদা দিতে হবে।
৩. সাংবাদিকদের জন্য কালো আইন ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট (৫৭ ধারা) বাতিল করতে হবে।
৪. মুক্ত সাংবাদিকতা নিশ্চিতকরণে পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করণ।
৫. সাগর রুনীসহ সব সাংবাদিক হত্যার মামলা দ্রুত নিশ্চিতকরণ।
তিনি আরও জানান, অতি দ্রুত এই ৫ দফা দাবি নিশ্চিত না হলে আগামীতে আরও বড় ধরণের কর্মসূচি ঘোষনা করা হবে।