চুয়াডাঙ্গা বেসরকারি সাহায্য সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশন কর্তৃক সম্প্রতি বেআইনিভাবে সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের ৫১৪ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকুরিচ্যুতির প্রতবিাদে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সেই সাথে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১২ টার সময় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এই সময় তারা বলেন, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী সংস্থার চাকুরী বিধি লঙ্ঘন করে ৬৮ বছর বয়সেও সম্পূর্ন অনৈতিক ভাবে নির্বাহী পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া তিনি নিজের মেয়েকে অনৈতিকতার সকল সীমা লঙ্ঘন করে ৮ ধাপ ডিঙিয়ে সংস্থার উপনির্বাহী পরিচালক-১ হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন। তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে তিনি বিগত ৩ বছরে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের অভিজ্ঞ, মেধাবী ও বিশ্বস্থ ৫১৪ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সম্পূর্ণ অন্যায় ও অনৈতিক এবং অমানবিক ভাবে পূর্ব নোটিশ বাদে যৌক্তিক কারণ ছাড়াই চাকুরিচ্যুত করেছেন।
মানব বন্ধনে চাকুরিচ্যুতদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন শফিউল ইসলাম রাজু,রকিবুল ইসলাম,শরিফা খাতুন, শিখা রানী, শেফালী খাতুন, সুলতানা খাতুন, জাহাঙ্গীর আলম, তহুরা খাতুন, আনোয়ার হোসেন সহ অন্যান্যরা। পরিশেষে তারা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলীর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাশসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে স্বারকলিপি প্রদান করেন।
সম্প্রতি বেসরকারি সাহায্য সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশনে তুঘলকি কান্ড শুরু হয়েছে, বিনা কারনে অথবা তুচ্ছ কারনে ৫ শতাধীক কর্মকর্তা ও কর্মচারিকে অমানবিক ভাবে চাকুরিচ্যুতি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিগত ৩ বছরে চরম অমানবিক ভাবে ন্যাক্কারজনক এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এর ফলে এই বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারি তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে অত্যন্ত শোচনীয় ও অমানবিক জীবন-যাপন করছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী সংস্থাকে সম্পূর্ন কুক্ষিগত করার মানসে নিজের মেয়েকে সম্পূর্ন অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই সু-প্রতিষ্ঠিত ও স্বনামধন্য ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপনির্বাহী পরিচালক-১ পদে বসানোর জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে এত বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারিকে বরখাস্ত অথবা অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের এ সকল বিশ্বস্থ, অভিজ্ঞ, দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের হারিয়ে অচিরেই এনজিও সেক্টরে সু-প্রতিষ্ঠিত ওয়েভ ফাউন্ডেশন ধ্বংশের মধ্যে নিপতিত হতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন দেশের বিশিষ্ঠ জনেরা।
চাকুরিচ্যুত এ সকল মানুষ কেউ ২৫বছর, কেউ ২০বছর আবার কেউ ১৫ বছর ১০ বছর যাবত নিজের মেধা শ্রম ও বিশ্বস্থতা আর দক্ষতা দিয়ে ওয়েভ ফাউন্ডেশনকে দেশের এনজিও সেক্টরে একটি মর্যাদার স্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে অপরিসীম অবদান রেখেছেন।
পরিশেষে সংস্থার নির্বাহী পরিচালকের উ”চভিলাসী চিন্তা চেতনার বলি হয়ে পরম আরাধ্য চাকুরি হারিয়ে আজ পথে পথে ঘুরছেন, মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। চাকুরি ফিরে পাওয়ার আশায় প্রতিনিয়তই ধরনা দিচ্ছেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনে হেড অফিস, ইউনিট অফিস ও ব্রাঞ্চ অফিস সহ কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে।
চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে এরই মধ্যে কেউ কেউ পক্ষঘাত গ্রস্থ, কেউ কেউ চরম অসুস্থ হয়ে মৃত্যূর প্রহর গুনছেন, ইতিমধ্যে কয়েকজন মারাও গেছেন। এরিয়া সমন্বয়কারী, কমিউনিটি ডেভেলপপমেন্ট অফিসার, ইউনিট ম্যানেজার, সহকারি প্রোগ্রাম অফিসার, পিয়ন, নাইটগার্ড, সহকারি সমন্বয়কারি, একাউন্টস অফিসার,সহকারি রিজিওনাল সমন্বয়কারী, মৎস কর্মকর্তা, ফিল্ড মোবিলাইজার, সাপোর্ট ষ্টাফ ইত্যাদী পদের মোট ৫১৪ জনকে বিগত ৪ বছরের বিভিন্ন সময়ে কাউকে বিনা কারনে অথবা কাউকে নামমাত্র কারনে বরখাস্ত,অব্যাহতি প্রদানের মত অমানবিক কাজ করে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনকে দূর্বিসহ করে দেয়া হয়েছে।
চাকুরি ফিরে পাওয়া সহ এই অমানবিক ও অন্যায়-অবিচারের প্রতিকার চেয়ে এনজিও সেক্টরের নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান মাইক্রো রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েও নির্ঘুম রাত ও আতঙ্কিত জীবন যাপন করছেন চাকুরি হারানো ঐ সকল মানুষজন। কারন এমআরএ’র কাছে অভিযোগ জানানোর কারনে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিভিন্ন ভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন এমনকি কারো কারো প্রাননাশের হুমকি পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
এমতাবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ এনজিও সেক্টরের নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান মাইক্রো রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) কর্তৃপক্ষের প্রতি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জোর দাবী জানিয়েছেন ভূক্তভোগী পরিবার সহ সচেতন মহল।